পশ্চিম মায়ানমারের চিন রাজ্যে, বিদ্রোহী যোদ্ধারা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটির দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে।
আল জাজিরায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইরত চিন ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স (সিএনডিএফ) ফালম শহর দখলের জন্য অভিযান চালাচ্ছে, যা “মিশন জেরুজালেম” নামে পরিচিত।
২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর গঠিত সিএনডিএফ, ফালমের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটিকে ঘিরে ফেলেছে।
তাদের এই লড়াইয়ে অনেক মূল্য দিতে হচ্ছে।
বিদ্রোহীদের কমান্ডার পিটার থাং জানিয়েছেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া এই অভিযানে প্রায় ৫০ জন সিএনডিএফ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।
এছাড়া, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, এবং একশ জনের বেশি সেনা সদস্যকে তারা বন্দী করতে সক্ষম হয়েছেন।
ফালম শহর দখল করা বিদ্রোহীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি চিন রাজ্যের প্রাক্তন রাজধানী এবং বিদ্রোহীদের মতে, কোনো শক্তিশালী জাতিগত গোষ্ঠীর সমর্থন ছাড়াই একটি জেলার কেন্দ্র দখল করার প্রথম ঘটনা।
বিদ্রোহীদের সীমিত অস্ত্রশস্ত্র এবং সামরিক বাহিনীর উন্নত প্রযুক্তির কারণে লড়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রায় ৬০০ বিদ্রোহী যোদ্ধা ফালম শহর অবরোধ করে রেখেছে, যেখানে প্রায় ১২০ জন সরকারি সেনা সদস্য একটি ঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছে।
হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাদের কাছে রসদ সরবরাহ করা হচ্ছে।
চিন রাজ্যে বিদ্রোহীদের মূল লক্ষ্য হলো মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সম্পূর্ণভাবে উৎখাত করা।
যদিও আগে আরাকান আর্মির (এএ) সহায়তায় বিদ্রোহীরা কিছু জয়লাভ করেছিল, তবে এবার ফালম দখলের মাধ্যমে তারা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে চাইছে।
বিদ্রোহীদের প্রধান সমস্যা হলো সামরিক বাহিনীর বিমান হামলা।
রাশিয়া ও চীন থেকে আসা যুদ্ধবিমানগুলি এই ঘাঁটিতে বোমা বর্ষণ করছে।
ফালমের সামরিক ঘাঁটিতে অবরুদ্ধ সৈন্যরা একসময় স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল, এমনকি তাদের মধ্যে অনেকে স্থানীয় চিন নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল।
কিন্তু ২০২১ সালে অং সান সু চি-র নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
এরপর শুরু হয় বিদ্রোহ, যা ধীরে ধীরে রক্তক্ষয়ী রূপ নেয়।
সংবাদ সংস্থা এপির তথ্যমতে, মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ৬,৩৫৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ফালমে বিদ্রোহীদের লড়াইয়ের কারণে অনেক সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
তবে বিদ্রোহীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভেদও দেখা যাচ্ছে।
চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (সিএনএফ) এবং চিন ব্রাদারহুড (সিবি) – এই দুটি প্রধান গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ রয়েছে।
যদিও সম্প্রতি তারা এক হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, তবুও তাদের মধ্যেকার বিভেদ এখনো কাটেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, ফালম দখল করা গেলে টেডিম শহর জয় করা সহজ হবে, যা সিবিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং সিএনএফের সঙ্গে তাদের দর কষাকষিতে সুবিধা এনে দেবে।
ফালম শহর থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে নতুন প্রজন্মের সদস্যরাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
১৫ বছর বয়সী জুনিয়র নামের এক কিশোরী, যে একটি হাসপাতালে কাজ করে, সে জানিয়েছে, “আমি যা পারি, তাই করব।
এখানে পড়াশোনার কোনো সুযোগ নেই।
আমি চাই না ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই পরিস্থিতির শিকার হতে হোক।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা