মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাইভারসিটি, ইক্যুইটি, এবং ইনক্লুশন (ডিইআই) প্রোগ্রামগুলোর উপর ফেডারেল সরকারের সমর্থন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি নির্বাহী আদেশ বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে একটি আপিল আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলো এখন কার্যকর হতে পারবে।
শুক্রবার (গতকালের) এই রায়টি আসে, যখন নিম্ন আদালত ট্রাম্পের এই আদেশকে স্থগিত করে দিয়েছিল। বাল্টিমোরের একটি ফেডারেল আদালতের বিচারক অ্যাডাম অ্যাবেলসনের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে বাতিল করে দেয় আপিল আদালত। এই মামলার শুনানির সময়, ট্রাম্পের এই ডিইআই বিরোধী পদক্ষেপের কারণে প্রথম সংশোধনী অধিকার নিয়ে উদ্বেগ উঠতে পারে বলে আপিল আদালতের তিনজন বিচারকের মধ্যে দুইজন মন্তব্য করেছেন। তবে, বিচারক প্যানেলের অন্য একজন সদস্য বলেছেন যে বিচারকের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার রায়টি অনেক বেশি ব্যাপক ছিল।
আদালতের নথি অনুযায়ী, বিচারক পামেলা হ্যারিস লিখেছেন, “আমি মনে করি না এই আদেশের মাধ্যমে ডিইআই-এর পক্ষে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বিরোধিতা করা উচিত।” জানা যায়, এই প্যানেলের দুইজন বিচারক বারাক ওবামার সময় এবং অন্যজন ট্রাম্পের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
বিচারক অ্যাবেলসনের মতে, ট্রাম্পের এই আদেশ সম্ভবত বাক-স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করে এবং এতে ডিইআই-এর কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকায় তা অসাংবিধানিক। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই ফেডারেল সংস্থাগুলোকে ‘ইক্যুইটি সম্পর্কিত’ সকল অনুদান বা চুক্তি বাতিল করার নির্দেশ দেন। পরে, তিনি একটি অনুবর্তী আদেশ জারি করেন, যেখানে ফেডারেল ঠিকাদারদের ডিইআই-এর প্রচার না করার বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে বলা হয়।
বাল্টিমোর শহর এবং অন্যান্য কয়েকটি গোষ্ঠী ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করে অভিযোগ করেন যে এই নির্বাহী আদেশগুলো রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার সাংবিধানিক লঙ্ঘন। তবে, বিচার বিভাগের যুক্তি ছিল, প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র ফেডারেল নাগরিক অধিকার আইন লঙ্ঘন করে এমন ডিইআই প্রোগ্রামগুলোর বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সরকারের আইনজীবীরা জানান, প্রেসিডেন্ট তাঁর অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফেডারেল ব্যয় সমন্বয় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, জো বাইডেনের দেওয়া অ্যাবেলসনের মতে, নির্বাহী আদেশগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সংস্থা এবং সরকারি সত্তাগুলোকে ডিইআই-এর প্রতি সমর্থন জানানো থেকে বিরত করবে।
ডিইআই প্রোগ্রামগুলো মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং সমাজে ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তবে, রিপাবলিকানরা দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে আসছেন। তাঁদের মতে, এই ব্যবস্থাগুলো শ্বেতাঙ্গদের জন্য মেধা-ভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতি এবং শিক্ষার সুযোগকে হুমকির মুখে ফেলে। অন্যদিকে, সমর্থকরা বলছেন, এই প্রোগ্রামগুলো ক্রমবর্ধমান বৈচিত্র্যপূর্ণ জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এবং পদ্ধতিগত বর্ণবাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব মোকাবিলায় সহায়ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিইআই কার্যক্রম ১৯৬০-এর দশকে শুরু হলেও, ২০২০ সালে জাতিগত ন্যায়বিচারের দাবিতে এর প্রসার ঘটে। বাল্টিমোরের মেয়র ও সিটি কাউন্সিলের পাশাপাশি এই মামলার বাদীপক্ষের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ ডাইভারসিটি অফিসার্স ইন হায়ার এডুকেশন, আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ইউনিভার্সিটি প্রফেসরস এবং রেস্টুরেন্ট অপরচুনিটিজ সেন্টারস ইউনাইটেড।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান