যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি নতুন জোট গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার। রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে বাঁচাতে এবং শান্তি চুক্তি হলে দেশটির সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এই জোট কাজ করবে।
শনিবার এক ভার্চুয়াল বৈঠকে স্টারমার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-সহ বিশ্বের ২৫ জন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও এই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে স্টারমার বলেন, “আমরা ইউক্রেনের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করব এবং স্থল, সমুদ্র ও আকাশে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি ‘স্বেচ্ছাসেবক জোট’ হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত থাকব।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রাথমিকভাবে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছেন। তবে শুক্রবার তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা এবং কিয়েভ নতুন সেনা মোতায়েন করতে পারবে কিনা, এমন কিছু বিষয় এখনো সুরাহা করা দরকার। উল্লেখ্য, রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন ইউক্রেনের একটি অংশ গত আগস্টে ইউক্রেনীয় বাহিনী সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল।
পুতিনের এই দ্বিধাগ্রস্ততা শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্তরিকতার ইঙ্গিত নাকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কৌশল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এমনটা হলে তা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অসন্তুষ্ট করতে পারে। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। স্টারমার বলেন, “ক্রেমলিনের এই দ্বিধা এবং ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বিলম্বিত করার বিষয়টি পুতিনের শান্তি প্রতিষ্ঠার ইচ্ছার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।”
বৈঠকের পরপরই জেলেনস্কি তাঁর পশ্চিমা মিত্রদের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা জানতে চান। তিনি জানান, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে সেনা মোতায়েন করা উচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি বলেন, “এটি ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা এবং ইউরোপের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।”
এদিকে, যুদ্ধ এখনো চলছে। কিয়েভ জানিয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় শহর পোক্রোভস্কের কাছে যুদ্ধ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তারা সম্প্রতি তৈরি করা একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সফল হয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাদের হটিয়ে দিতে রাশিয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় সেনা ‘ঘেরাও’ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে সতর্ক করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে জেলেনস্কি তাঁর শীর্ষ জেনারেলের সঙ্গে কথা বলার পর জানিয়েছেন, কুরস্কে ইউক্রেনীয় সেনারা ঘেরাও হয়নি, বরং মস্কো ওই অঞ্চলে নতুন করে সেনা জমা করছে।
এছাড়াও, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশই আকাশপথে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। উভয় পক্ষই জানিয়েছে, তারা তাদের ভূখণ্ডে ১০০টির বেশি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার কারণে রাশিয়ার ভলগোগ্রাদ অঞ্চলের একটি তেল শোধনাগারের কাছে আগুন ধরে যায়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা শনিবার রাতে ১২৬টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ৬৪টি ভলগোগ্রাদ অঞ্চলে ধ্বংস করা হয়েছে। ভোরোনেজ, বেলগোরোদ, ব্রায়ানস্ক, রোস্তভ এবং কুরস্ক অঞ্চলেও ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা