ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধানকে বরখাস্ত করার চেষ্টা করছেন। এই পদক্ষেপ গভীর রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যার মূল কারণ গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলার দায় কার, সেই বিষয়ে মতবিরোধ।
খবর অনুযায়ী, নেতানিয়াহু শিন বেট-এর প্রধান রোনেন বারকে সরিয়ে দিতে চান। শিন বেট হলো ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা, যা দেশের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।
প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, নেতানিয়াহুর সঙ্গে বার-এর ‘আস্থা’র অভাব তৈরি হয়েছে। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে শিন বেটের তদন্ত চলায় এই বিরোধ আরও বেড়েছে।
রোনেন বার অবশ্য এখনই পদ ছাড়তে রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, স্পর্শকাতর কিছু তদন্ত শেষ করা এবং গাজায় আটকে পড়া জিম্মিদের উদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ এখনো তার হাতে রয়েছে।
তাছাড়া, উত্তরসূরি নির্বাচনের প্রস্তুতিও তার অন্যতম কাজ। বার মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আনুগত্যের প্রত্যাশা জনস্বার্থের পরিপন্থী।
তবে, অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারা জানিয়েছেন, কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে নেতানিয়াহুকে তার সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি ব্যাখ্যা করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, শিন বেটের কাজ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আস্থা অর্জন করা নয়।
শিন বেট এর আগে এক প্রতিবেদনে অক্টোবর মাসের হামাস হামলার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তারা সরকারের নীতির সমালোচনা করে বলেছে, সরকারের ভুল পদক্ষেপের কারণেই এই হামলার পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও তাদের এক প্রতিবেদনে হামাসের সক্ষমতা সম্পর্কে তাদের ধারণার ঘাটতির কথা স্বীকার করেছে, শিন বেট জানিয়েছে, তারা হামলার বিষয়ে আগে থেকেই অবগত ছিল।
কিন্তু তাদের প্রতিরোধের চেষ্টাগুলো কার্যকর করা হয়নি। নেতানিয়াহু অবশ্য এই হামলার জন্য সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন।
তিনি একটি সরকারি তদন্ত কমিশন গঠনের বিরোধিতা করছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হয় বরখাস্ত করা হয়েছে, না হয় পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
বার-ই ছিলেন ৭ অক্টোবরের হামলার পর থেকে স্বপদে বহাল থাকা কয়েকজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম।
যদি নেতানিয়াহু বারকে সরাতে সক্ষম হন, তাহলে তিনি তার অনুগত কাউকে ওই পদে বসাবেন। এমনটা হলে তদন্ত কমিশনের কার্যক্রম বিলম্বিত হতে পারে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, বারকে সরানো গেলে ইসরায়েল ‘যুদ্ধ লক্ষ্য অর্জন’ করতে এবং ‘ভবিষ্যতের দুর্যোগ’ প্রতিরোধ করতে পারবে।
তবে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে হলে পার্লামেন্ট, অর্থাৎ নেসেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। বিরোধী দলনেতা ইয়াইর লাপিদ বারকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং একে ‘লজ্জাজনক’ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, ইসরায়েলের সুশীল সমাজও নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। ‘মুভমেন্ট ফর কোয়ালিটি গভর্নমেন্ট ইন ইসরায়েল’ নামক একটি সংগঠন একে ‘আইনের শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
তাদের মতে, নেতানিয়াহুর নিজের অফিসের বিরুদ্ধে তদন্ত চলায় বারকে সরানোর কোনো অধিকার নেই। নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর থেকে তিনি গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের দ্বারা ‘গভীর রাষ্ট্রের’ ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করে আসছেন।
২০২৩ সালের শুরুতে তিনি দেশের বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের একটি পরিকল্পনা শুরু করেন, যা নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, এর মাধ্যমে তিনি দেশের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য দুর্বল করতে চাইছেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস