একটি উদ্বেগের বিষয়: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি আবারও দেখা দেবে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’? বাংলাদেশের জন্য এর অর্থ কী?
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) দেশটির অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন কিছু পূর্বাভাস দিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিমালার কারণে সৃষ্ট শুল্কের (ট্যারিফ) প্রভাব অর্থনীতিকে ধীর করে দিতে পারে এবং একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়াতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর মতো একটি কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
স্ট্যাগফ্লেশন আসলে কী? সহজ ভাষায়, স্ট্যাগফ্লেশন হলো এমন একটি অবস্থা যখন একটি দেশের অর্থনীতিতে একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায় (stagnation বা স্থবিরতা), অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়ে।
অর্থাৎ, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনা, বরং অনেক সময় কমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায় এবং ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির শিকার হন।
ফেডের সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ৪.৪ শতাংশে পৌঁছতে পারে, যা আগে ধারণা করা হয়েছিল ৪.৩ শতাংশ। এছাড়া, মূল্যস্ফীতি ২.৭ শতাংশে পৌঁছতে পারে, যা আগে ছিল ২.৫ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদন (Gross Domestic Product) ১.৭ শতাংশ হারে বাড়তে পারে, যা আগে ২.১ শতাংশ ধরা হয়েছিল।
আগেও একবার ১৯৭০ এর দশকে বিশ্বে স্ট্যাগফ্লেশনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেসময়, আরব দেশগুলো কর্তৃক তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল, যা জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দেয়।
সেই সময়টাতে একদিকে যেমন বেকারত্ব বেড়েছিল, তেমনি জিনিসপত্রের দামও বেড়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কোনো ধরনের মন্দা দেখা দিলে তার প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়তে পারে। বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর এর একটা প্রভাব থাকতে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের একটি বড় বাজার।
তবে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭০ দশকের মতো ভয়াবহ নয়।
এছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক সংস্থা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বিবেচনা করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এছাড়াও, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন।
মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন