নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিরিজ ‘অ্যাডোলেসেন্স’-এর নেপথ্যের কিছু অজানা গল্প। সম্প্রতি নেটফ্লিক্স-এ মুক্তি পাওয়া ‘অ্যাডোলেসেন্স’ (Adolescence) সিরিজটি বিশ্বজুড়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
বিশেষ করে এর নির্মাণশৈলী দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। প্রতিটি এক ঘণ্টার পর্ব তৈরি করা হয়েছে একটানা শ্যুটিংয়ের মাধ্যমে, যা ছিল অত্যন্ত কঠিন একটি প্রক্রিয়া।
সম্প্রতি জানা গেছে, এই সিরিজের পেছনে ছিল এক দারুণ পরিকল্পণা ও কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এই সিরিজের পরিচালক ফিলিপ বারানতিনি জানান, সবকিছু শুরু হয়েছিল একটি বিশেষ বন্ধুত্বের সূত্রে।
এর আগে তিনি ‘বয়েলিং পয়েন্ট’ (Boiling Point) নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র বানিয়েছিলেন, যেখানে অভিনেতা স্টিফেন গ্রাহাম প্রধান চরিত্রে ছিলেন। “আসলে, সবকিছু শুরু হয়েছিল আমার এক বন্ধুর ইচ্ছায়।
সে পরিচালক হতে চেয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, আগে কাজ করে দেখা, ভালো হলে আবার কথা হবে।
জানান গ্রাহাম। সিরিজটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো, এর প্রতিটি দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে একটানা।
এর জন্য ক্যামেরাম্যান ও কলাকুশলীদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের একটি দৃশ্যে ক্যামেরাকে ড্রোন-এর সাথে বেঁধে আকাশে ওড়ানো হয়।
দৃশ্যটিতে দেখা যায়, অভিনেতা অ্যাশলি ওয়াল্টার্স গাড়ি থেকে নামছেন, আর ক্যামেরাটি উড়ে গিয়ে স্টিফেন গ্রাহামের মুখের দিকে যাচ্ছে। বারানতিনি জানান, এই দৃশ্যের জন্য চিত্রগ্রাহক ম্যাথিউ লুইসকে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছিল।
এমনকি ড্রোনের গতিপথ এবং লুইসের দৌড়ের মধ্যে সময়ের সঠিক হিসাব রাখতে হয়েছিল। তবে, এই ড্রোন শটটি নিয়ে শুরুতে অন্যরকম পরিকল্পনা ছিল নির্মাতাদের।
পরিচালক জানান, “প্রথম দিকে ড্রোনের মাধ্যমে দৃশ্যটি ধারণ করার পরিকল্পনা ছিল, যা পুরো পর্বের শেষে দেখানো হতো। কিন্তু শুটিংয়ের মাঝপথে নেটফ্লিক্সের একজন নির্বাহী টবি বেন্টলি ধারণা দেন, স্টিফেন গ্রাহামকে দৃশ্যের শেষে দেখা গেলে ভালো হয়।
শুটিংয়ের সময় প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে কলাকুশলীদের। প্রতিটি পর্বের শুটিং এক সপ্তাহ ধরে চলত।
স্টিফেন গ্রাহাম জানান, “একদিন সকালে শট নেওয়া হতো, আবার বিকেলে। বৃহস্পতিবার বাতাসের বেগ বেশি থাকায় শুটিং করা যায়নি। শুক্রবার সকালে যখন কাজ শুরু হলো, তখন ড্রোনের ব্যালান্স ঠিক ছিল না, ফলে সেটি পড়ে যায়।
এরপর তারা পরিকল্পনা পরিবর্তন করে গ্রাহামকে একটি স্কুলের সামনে দাঁড় করিয়ে দৃশ্যটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিরিজে অভিনেতা ওয়েন কুপার (Owen Cooper)-এর অভিনয় দর্শকদের মন জয় করেছে।
তবে শুটিংয়ের সময় তাকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় পর্বে কুপারের কণ্ঠ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়।
কুপার জানান, “প্রতিটি দৃশ্যে চিৎকার ও চেঁচামেচি করতে গিয়ে আমার গলা ভেঙে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, আমি যেন ৩০ বছর ধরে ধূমপান করছি।
সিরিজটির শুটিং লোকেশন নিয়েও ছিল বিশেষ পরিকল্পনা। প্রথম পর্বের বেশিরভাগ দৃশ্য একটি পুলিশ স্টেশনে ধারণ করা হয়, যা ছিল মূলত একটি সেট।
তবে, গ্রেফতারের আগের দৃশ্যের জন্য নির্মাতারা একটি আসল বাড়ি খুঁজে বের করেন, যা স্টুডিও থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে ছিল। বর্তমানে নেটফ্লিক্সে ‘অ্যাডোলেসেন্স’ দেখা যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান