জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। টোকিওতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বৈঠকে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়া, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো তাই-য়ুল-এর মধ্যে আলোচনা হয়। তাঁরা সকলে মিলে পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই বৈঠকটি ছিল ২০২০ সালের পর এই তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম বৈঠক।
বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস স্মরণ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই তিন দেশের মিলিত জনসংখ্যা প্রায় ১.৬ বিলিয়ন এবং তাদের সম্মিলিত অর্থনৈতিক উৎপাদন ২৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। বিশাল বাজার এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে এই দেশগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
চীন তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু করতে এবং ১৫ জাতির আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের (Regional Comprehensive Economic Partnership – RCEP) সদস্যপদ প্রসারিত করতে চায়।
জাপানের পক্ষ থেকে চীনের বাজারে জাপানি সামুদ্রিক খাবারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দূষিত পানি ছাড়ার কারণে চীন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এছাড়া, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি এবং তাইওয়ানের কাছাকাছি চীনের সামরিক তৎপরতা নিয়েও আলোচনা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতে রাজি করানোর জন্য চীনের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
একইসঙ্গে, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অবৈধ সামরিক সহযোগিতা বন্ধেরও আহ্বান জানানো হয়।
জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। তারা মনে করে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি তৈরি করছে।
এই পরিস্থিতিতে, দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। এই বৈঠকের মাধ্যমে দেশগুলো তাদের মধ্যকার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে চাইছে, যা এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা