দ্রুত খাবার খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
খাবার খাওয়ার সময় কি আপনি খুব তাড়াহুড়ো করেন? হয়তো বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবার সময় এসেছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা সাধারণত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ওপর জোর দেন। কিন্তু খাবার খাওয়ার গতিও যে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে অনেকেই হয়তো অবগত নন।
দ্রুত খাবার খেলে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে, যেমন- খাবার গলায় আটকে যাওয়া এবং পেট ভরার সংকেত পাওয়ার আগেই অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার খাওয়ার সঠিক গতি হলো- খাবার ধীরে ধীরে খাওয়া। যদি কোনো ব্যক্তি ২০-৩০ মিনিটের কম সময়ে খাবার শেষ করেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি খুব দ্রুত খাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর বিহেভিয়রাল হেলথের বিশেষজ্ঞ লেসলি হেইনবার্গ বলেন, “সাধারণত পাকস্থলী থেকে মস্তিষ্কে পেট ভরার সংকেত পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে। তাই যারা দ্রুত খান, তারা এই সংকেত পান না এবং অনেক সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে। দ্রুত খাবার খেলে বেশি বাতাস শরীরে প্রবেশ করে, যা পেট ফাঁপা বা বদহজমের কারণ হতে পারে।
খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে না খেলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে খাবারের পুষ্টিগুণ শরীর সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। এছাড়া, খাবার ভালোভাবে চিবানো না হলে খাদ্যনালীতেও আটকে যেতে পারে।
চিকিৎসকরা দ্রুত খাবার খাওয়ার সঙ্গে স্থূলতার একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ধীরে ধীরে খান, তাদের মধ্যে স্থূলতার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
তাহলে খাবার খাওয়ার গতি কমানো যায় কীভাবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবার খাওয়ার সময় টিভি দেখা বা মোবাইল ফোনে মনোযোগ দেওয়ার মতো কাজগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, টিভি দেখতে বা মোবাইল ব্যবহার করতে থাকলে অনেক সময় মানুষ অজান্তেই বেশি খেয়ে ফেলে।
লেসলি হেইনবার্গ আরও বলেন, “যখন আমরা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিই, তখন খাবারের প্রতি আমাদের মনোযোগ কমে যায়। ফলে আমরা কতটুকু খাচ্ছি, সে বিষয়ে খেয়াল থাকে না এবং বেশি খেয়ে ফেলি।”
খাবার খাওয়ার সময় অন্য কোনো কাজ না করে খাবারের প্রতি মনোযোগ দিলে খাবারটি ভালোভাবে উপভোগ করা যায় এবং কম খাওয়া হয়।
ডা. হেইনবার্গ আরও যোগ করেন, খাবার খাওয়ার গতি কমানো অভ্যাস পরিবর্তনের একটি অংশ। এক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, যেমন- বাম হাতে (যদি ডানহাতি হন) খাবার খাওয়া, চামচ বা কাঁটাচামচের পরিবর্তে অন্য কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করা অথবা খাবার খাওয়ার মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি নেওয়া এবং পানি পান করা।
যদি কর্মব্যস্ত জীবন থাকে, তবে অফিসের মিটিংয়ে অথবা তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। ব্রিটেনের পুষ্টি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ZOE-এর প্রধান বিজ্ঞানী সারা বেরি বলেন, “খাবার খাওয়ার সময় খাবারের স্বাদ ও অনুভূতির দিকে মনোযোগ দিন। যদি আমরা সচেতন না থাকি, তাহলে দ্রুত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং কতটুকু খাচ্ছি, সে বিষয়ে খেয়াল থাকে না।”
ব্রিটিশ সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হেলেন ম্যাকার্থি মনে করেন, খাবার ধীরে খাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো- খাবার ভালোভাবে চিবানো। তিনি বলেন, “প্রতিটি লোকমা ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে খাবার খাওয়ার গতি কমে আসে।”
খাবারের ধরনও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ফাস্ট ফুড সহজে খাওয়া যায়, কারণ এগুলোর টেক্সচার নরম থাকে।
হেলেন ম্যাকার্থি আরও বলেন, “শাকসবজি বা প্রোটিন জাতীয় খাবার চিবিয়ে খেতে বেশি সময় লাগে, যা দ্রুত খাওয়া সম্ভব নয়।”
ডা. ম্যাকার্থির কাছে আসা কয়েকজন রোগী খাবার ধীরে খাওয়ার পর একটি অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন নিয়মিত চিপস খেতেন।
যখন তাকে প্রতিটি চিপস আলাদাভাবে ধীরে ধীরে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, তখন তিনি জানান, চিপসগুলো আর আগের মতো উপভোগ্য ছিল না।
সুতরাং, খাবার খাওয়ার সময় সচেতনতা অবলম্বন করে এবং কিছু কৌশল অনুসরণ করে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস