**সুইডেনে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি: প্রতিবাদে পথে নামছেন ক্রেতারা**
সুইডেনে খাদ্যপণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশটির প্রধান সুপারমার্কেটগুলোর বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন ক্রেতারা। গত কয়েক মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায়, তারা এই প্রতিবাদ কর্মসূচী শুরু করেছেন।
দেশটির বিভিন্ন শহরে, বিশেষ করে রাজধানী স্টকহোমে, এই বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, মুনাফার লোভে সুপারমার্কেটগুলো সিন্ডিকেট করে ইচ্ছাকৃতভাবে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়াচ্ছে।
খুচরা বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুইডেনের সাধারণ পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। অনেক পরিবার তাদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে একটি পরিবারের খাদ্য বাবদ খরচ প্রায় ৩৩ হাজার ৬০০ টাকার বেশি বেড়েছে। কফি সহ কিছু পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে।
গত ফেব্রুয়ারী মাসে খাদ্যপণ্যের দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়ার পর, ভোক্তারা একত্রিত হয়ে সুপারমার্কেট বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বয়কট আন্দোলনের প্রচারণা চালানো হয়, যা দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এই প্রতিবাদের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সুপারমার্কেট এবং খাদ্য উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক ধরনের অলিগোপলি বা বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কথা না ভেবে নিজেদের লাভের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
অন্যদিকে, সুপারমার্কেটগুলো বলছে, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পণ্যের দাম, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং জলবায়ু সংকট সহ বিভিন্ন কারণের জন্য খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে।
সুইডেনের এই পরিস্থিতি ইউরোপের অন্যান্য দেশের প্রতিবাদের সঙ্গে মিলে যায়। বুলগেরিয়ার ভোক্তারাও খাদ্যদ্রব্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সুপারমার্কেট বয়কট করেছেন, যার ফলে তাদের ব্যবসা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো এবং সার্বিয়ার মতো দেশগুলোতেও একই ধরনের প্রতিবাদ দেখা গেছে।
বয়কট আন্দোলনের একজন প্রধান উদ্যোক্তা, মালমোর শিক্ষার্থী ফিলিপা লিন্ড বলেন, উচ্চ মূল্যের কারণে তিনি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি আরো জানান, সরকারের উচিত এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, যা বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল করতে তারা কাজ করছে। তবে, বিরোধী দল সরকারের এই বিষয়ে পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন কৌশল গ্রহণের কথা জানানো হয়েছে।
সুপারমার্কেট কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা গ্রাহকদের উদ্বেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং দাম বাড়ানোর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সরবরাহ খরচ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা এর মধ্যে অন্যতম।
তারা এও উল্লেখ করেছেন, বয়কটের কারণে তাদের দোকানে ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে ভোক্তারা তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এটি খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলা উদ্বেগের একটি অংশ, যা বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান