যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে ফাঁস হওয়া বার্তালাপের মাধ্যমে ইউরোপ নিয়ে গভীর উদ্বেগের চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া এই সংবেদনশীল তথ্যে, বিশেষ করে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার সময়, ইউরোপের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা ও সমালোচনামূলক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।
ফাঁস হওয়া তথ্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন রিপাবলিকান নেতা জে.ডি. ভেন্স। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল।
ভেন্সের মতে, সুয়েজ খাল দিয়ে যে পরিমাণ বাণিজ্য হয়, তার মাত্র ৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের, যেখানে ইউরোপের ৪০ শতাংশ বাণিজ্য এই পথ দিয়ে সম্পন্ন হয়। তিনি আরও মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তবে এর ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর বাণিজ্য আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আলোচনায় প্রতিরক্ষা সচিবের দায়িত্বে থাকা পিট হেগসেথ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ওয়াল্টজ এবং ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারসহ আরও অনেকে ইউরোপের প্রতি এই মনোভাব প্রকাশ করেন। তাদের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির সুবিধাভোগী, যা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাবের ইঙ্গিত দেয়।
আলোচনায় ভেন্সের বক্তব্য ছিল, যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই ইউরোপের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে আসছে। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, কিছু ইউরোপীয় দেশ (সম্ভবত যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স) দীর্ঘদিন ধরে কোনো যুদ্ধে অংশ নেয়নি।
যদিও এই দেশগুলো আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছিল। এই বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন, যা তার ইউরোপ সম্পর্কে ধারণাকে আরও স্পষ্ট করে।
ফাঁস হওয়া এই আলোচনাগুলোতে ভেন্সের সঙ্গে অন্যদের মতের মিল না দেখা গেলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে ইউরোপের প্রতি মনোভাব যে একই রকম, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো ইউরোপকে তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়াতে বাধ্য করতে চাইছে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান, কাজা কাল্লাস, ভেন্সের এই ধরনের মন্তব্যকে ইউরোপের সঙ্গে “যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য কূটনীতিকরাও বিষয়টিকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন।
আলোচনার শেষে, স্টিফেন মিলার স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ছিল পরিষ্কার—হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এর বিনিময়ে মিশর ও ইউরোপের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করা হচ্ছে, তা দ্রুত জানানো হবে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, অনেকে এখন ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কেউ কেউ এমন ধারণাও পোষণ করেন যে, ইউরোপের পরিবর্তে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে।
কারণ, তাদের মতে, বর্তমান ইউরোপীয় ইউনিয়ন “কার্যকরী নয়”।
বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক নীতিতে পরিবর্তনগুলো আমাদের দেশের স্বার্থের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই, এই ধরনের ঘটনাপ্রবাহের দিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।
তথ্য সূত্র: The Guardian