অস্ট্রেলিয়ার ২০৩২ সালের অলিম্পিক গেমসের আসর বসতে যাচ্ছে ব্রিসবেন শহরে। এই আসরের রোয়িং প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের একটি নদী, ফিটজরয়কে (Fitzroy River) নির্বাচন করার প্রস্তাব এসেছে।
কিন্তু এই নদীর আশেপাশে রয়েছে লোনা জলের কুমিরের (Saltwater Crocodile) অবাধ বিচরণ। আর এই কারণেই আসন্ন অলিম্পিক গেমসের রোয়িং প্রতিযোগিতা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
ফিটজরয় নদীর তীরে অবস্থিত রকহ্যাম্পটন শহরটি ‘অস্ট্রেলিয়ার গরুর রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত। ব্রিসবেন থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই শহরেই অলিম্পিকের রোয়িং ইভেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তবে, এই নদীর কুমিরেরা এখানকার মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কুমিরগুলির সহাবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতার জন্য এই স্থানটি কতটা উপযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) এবং ওয়ার্ল্ড রোয়িং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া এখনও বাকি। এই পরিস্থিতিতে, অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় রোয়িং ফেডারেশন ‘রোয়িং অস্ট্রেলিয়া’র প্রধান নির্বাহী সারা কুক জানিয়েছেন, ফিটজরয় নদী আন্তর্জাতিক মানের নিয়মাবলী পূরণ করে কিনা, তা নিয়ে তারা সন্দিহান।
একটি আন্তর্জাতিক মানের কোর্সের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সেখানে কোনো স্রোত থাকা চলবে না। কিন্তু ফিটজরয় নদীতে সেই বৈশিষ্ট্য কতটা বিদ্যমান, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
তবে, কুমিরের উপদ্রব নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন সারা কুক। তিনি উল্লেখ করেছেন, রকহ্যাম্পটনের স্থানীয় রোয়িং কমিউনিটি বেশ সক্রিয় এবং তারা অলিম্পিকের প্রশিক্ষণ ভেন্যু হিসেবে এই স্থানটি ব্যবহার করে থাকে।
যদিও আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য কুমির একটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকের আগে অস্ট্রেলিয়ান রোয়িং দল এই নদীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এবং লস অ্যাঞ্জেলেস গেমসের আগেও তারা এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
তবে শুধু বিদেশি প্রতিযোগী নয়, স্থানীয়রাও এই বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিস্মিত। অলিম্পিক কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই অবাক হয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও এক রেডিও সাক্ষাৎকারে ফিটজরয়ে রোয়িংয়ের প্রস্তাবনার বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে কিছুটা দ্বিধা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই প্রস্তাবনাটি কতটা যুক্তিসঙ্গত, তা তিনি নিশ্চিত নন।
অন্যদিকে, ব্রিসবেন অলিম্পিক কমিটির প্রধান অ্যান্ড্রু লিভারিস জানিয়েছেন, তাঁদের ‘পারব না’ মানসিকতা ত্যাগ করে ‘পারব’ মানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি মনে করেন, সমুদ্রে যেমন হাঙর থাকে, তেমন ঝুঁকি নিয়েই সার্ফিং হয়।
জলের নিচে থাকা প্রাণীদের নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার কিছু নেই।
রকহ্যাম্পটন ফিটজরয় রোয়িং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সারা ব্ল্যাক জানান, কুমির দেখা গেলে তা জানানোর জন্য তাঁদের একটি প্রক্রিয়া রয়েছে এবং তাঁরা কুমিরের আচরণবিধি সম্পর্কে অবগত।
তিনি আরও যোগ করেন, ফিটজরয় নদীতে কুমির থাকাটা স্বাভাবিক, তবে গণমাধ্যমে বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে ‘কুমিরে ভরা’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
স্থানীয় কুমির বিশেষজ্ঞ জন লিভারের মতে, ফিটজরয় নদী লোনা জলের কুমিরের আবাসস্থলের একেবারে শেষ প্রান্ত। তিনি মনে করেন, অলিম্পিকের জন্য স্থান নির্বাচন একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত।
যদিও এর জন্য পরিবেশ দপ্তরকে কুমির অপসারণের ব্যবস্থা করতে হতে পারে এবং নদীর অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
জন লিভার আরও জানান, এখানে কুমিরগুলো সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না। এমনকি মানুষজন নিয়মিত এই নদীতে সাঁতার কাটে এবং এর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে।
তিনি রকহ্যাম্পটনের প্রতীক চিহ্নের উদাহরণ দিয়ে দেখান, যেখানে একটি কুমির শহরের ইতিহাসকে ধারণ করে আছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান