আলো ঝলমলে দৃশ্যের চিত্রকর, টমাস কিনকেডের জীবন ও শিল্পকর্ম: খ্যাতির শিখর থেকে পতনের এক মর্মান্তিক কাহিনী।
বিংশ শতাব্দীর শেষ এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ‘আলোর চিত্রকর’ হিসেবে পরিচিত আমেরিকান শিল্পী টমাস কিনকেডের নাম মানুষের মুখে মুখে ছিল। তাঁর আঁকা শান্ত, স্নিগ্ধ, আলো ঝলমলে দৃশ্যগুলি ক্যালেন্ডার, শুভেচ্ছা কার্ড থেকে শুরু করে আসবাবপত্র পর্যন্ত সর্বত্র দেখা যেত।
এক সময়ে তাঁর ব্যবসার পরিমাণ এতটাই বেড়েছিল যে, বছরে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি হত, যা অনেক বাংলাদেশি জেলার বার্ষিক বাজেটের সমান। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত একটি তথ্যচিত্র, ‘আর্ট ফর এভরিবডি’, কিনকেডের জীবন এবং শিল্পকর্মের সেই উত্থান ও পতনের গল্প নতুন করে তুলে ধরেছে।
কিনকেডের সাফল্যের পেছনে ছিল তাঁর ছবিগুলির এক বিশেষ আকর্ষণ। তাঁর আঁকা ছবিতে ছিল প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, যা মানুষকে এক শান্ত ও আরামদায়ক জগতে নিয়ে যেত। এই ছবিগুলো সহজেই মানুষের মন জয় করতে পারত।
কিন্তু খ্যাতির এই আলো ঝলমলে দুনিয়ার আড়ালে লুকিয়ে ছিল অন্য এক অন্ধকার দিক। অতিরিক্ত মদ্যপান, নারীদের প্রতি খারাপ আচরণ এবং ব্যবসায়িক প্রতারণার অভিযোগ—এসবই ছিল তাঁর জীবনের অংশ।
মিরান্ডা ইউসেফ পরিচালিত ‘আর্ট ফর এভরিবডি’ তথ্যচিত্রে কিনকেডের জীবনের এই দিকগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধান করা হয়েছে। ছবিতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে তিনি নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করেছিলেন এবং তা সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছিল।
একই সঙ্গে, খ্যাতি এবং অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে তিনি কীভাবে ব্যক্তিগত জীবনে গভীর ক্ষত তৈরি করেছিলেন, তাও তুলে ধরা হয়েছে।
কিনকেডের আর্ট সমালোচিতও হয়েছে। অনেক সমালোচক তাঁর শিল্পকর্মকে সাদামাটা এবং গভীরতাবিবর্জিত বলে মনে করতেন। তাঁদের মতে, কিনকেডের ছবিগুলো সমাজের উঁচু শ্রেণির রুচির প্রতিনিধিত্ব করে না।
তবে, তাঁর বিপুল সংখ্যক ভক্ত ছিল, যারা তাঁর কাজকে ভালোবাসতেন এবং নিজেদের জীবনের সঙ্গে একাত্ম বোধ করতেন। তথ্যচিত্রে তাঁদের অনুভূতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে।
কিনকেডের জীবন আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। খ্যাতি এবং সাফল্যের পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ অনেক সময় নিজের সত্তা হারিয়ে ফেলে। তথ্যচিত্রটি সেই গল্পই বলে, যেখানে একজন শিল্পী তাঁর নিজস্ব আবেগকে বিসর্জন দিয়ে, খ্যাতি নামক সোনার খাঁচায় বন্দী হয়েছিলেন।
এই ছবিতে, কিনকেডের শৈশব, শিল্পী হওয়ার পেছনে তাঁর অনুপ্রেরণা, এবং তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে।
এই তথ্যচিত্রের পরিচালক মিরান্ডা ইউসেফ মনে করেন, কিনকেডের জীবন একটি ‘আধুনিক যুগের গ্রিক ট্র্যাজেডি’। এটি আমাদের শিল্পী এবং শিল্পের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করতে পারে।
তিনি বলেছেন, “যদি একটি বিষয় মানুষ এই সিনেমা থেকে নেয়, তবে সেটি হলো—অন্যদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা নিয়ে তাদের দেখা।”
কিনকেডের জীবন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, খ্যাতি এবং সাফল্য অর্জনের পথে অনেক ঝুঁকি থাকে। নিজের আত্ম-অনুসন্ধান এবং সৃজনশীলতাকে অবহেলা করে, খ্যাতি অর্জনের চেষ্টা করলে তা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian