মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা ত্রুটি, যা থেকে শিক্ষা নিতে পারে শত্রুপক্ষ।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের একটি চ্যাট গ্রুপের মাধ্যমে হওয়া তথ্য আদান-প্রদানের ঘটনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনার সূত্রে জানা যায়, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার সময়, অনিচ্ছাকৃতভাবে একজন সাংবাদিককে সেই গোপন চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করা হয়।
এর ফলস্বরূপ, নিরাপত্তা বিষয়ক বেশ কিছু গুরুতর দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে, যা আমেরিকার প্রতিপক্ষ দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
আলোচিত ঘটনাটি মূলত তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে হওয়া আলোচনাকে কেন্দ্র করে। সরকারি অনুমোদনহীন একটি অ্যাপ ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করা হয়েছে, যা নিরাপত্তা বিধিনিষেধের চরম লঙ্ঘন।
সামরিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরও এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব দেখা গেছে। এই ধরনের ঘটনা কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত চরিত্র এবং বর্তমান প্রশাসনের কার্যকারিতা সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটিগুলি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জন্য মূল্যবান হতে পারে। এর মাধ্যমে তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে এবং তাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করতে পারে।
যেমন, কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত জীবনযাত্রা, মদ্যপান বা অন্য কোনো দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয়গুলোও তাদের নজরে আসতে পারে।
এই ঘটনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কর্মকর্তাদের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত মাধ্যম। যদিও সিগন্যাল-এর মতো এনক্রিপ্টেড (encrypted) অ্যাপ ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে অনিরাপদ ডিভাইসে এটি ব্যবহার করার কারণে তথ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সংবেদনশীল আলোচনা সুরক্ষিত, সুসংগঠিত তথ্য কেন্দ্রে (secure, compartmentalised information facility – SCIF) অথবা সরকার অনুমোদিত অন্য কোনো নিরাপদ মাধ্যমে করা উচিত।
এই ঘটনার মাধ্যমে, শত্রুপক্ষ জানতে পারবে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার সাংগঠনিক কাঠামো কেমন ছিল। এছাড়াও, কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য আছে কিনা, তাও তারা জানতে পারবে।
যেমন, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স-এর আক্রমণের সময় নিয়ে দ্বিমত পোষণ এবং ট্রাম্পের নীতিগত অসামঞ্জস্যতা সম্পর্কে অবগত না থাকার বিষয়টিও এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং বিশ্ব শান্তির জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন একটি দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পরে, তেমনিভাবে অন্যান্য দেশগুলোও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য, এই ধরনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং নিজেদের তথ্য সুরক্ষার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান