টেক্সাসের এল পাসোতে ২০১৯ সালে একটি ওয়ালমার্টে ২১ বছর বয়সী শ্বেতাঙ্গ প্যাট্রিক ক্রুসিয়াসের বন্দুক হামলায় ২৩ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) আদালতের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের শুনানিতে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্যারোলেরও কোনো সুযোগ থাকছে না।
জেলা অ্যাটর্নি জেমস মন্টয়া এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের একটি বড় অংশ দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি চায়। তাঁদের এই ইচ্ছার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্টয়া আরও বলেন, “এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হল, ভয়াবহ ওই দিনের ঘটনার শিকার ২৩ জন নিহত এবং ২২ জন আহত ব্যক্তির পরিবারকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি চূড়ান্ত সমাধান দেওয়া। এখন, এই সম্প্রদায়ের কাউকে আর এই অপরাধীর নাম শুনতে হবে না। কোনো শুনানি বা আপিলও করা হবে না। সে কারাগারে মারা যাবে।”
তবে, মন্টয়া স্বীকার করেছেন যে, নিহতদের সব পরিবার এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন। এর আগে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের জন্য বিচার চেয়েছিলো।
ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া আদ্রিয়া গনজালেজ বলেন, “আমার মনে হয়, মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া ভুক্তভোগীদের প্রতি চরম উপহাস।”
প্রস্তাব অনুযায়ী, ক্রুসিয়াস দোষ স্বীকার করলে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে। আগামী ২১ এপ্রিল এই মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে।
সেদিন ভুক্তভোগীদের পরিবার তাঁদের বক্তব্য পেশ করতে পারবেন। ক্রুসিয়াসের আইনজীবী মার্ক স্টিভেন্স তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২৬ বছর বয়সী ক্রুসিয়াস ২০১৯ সালের ওই হামলার আগে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী একটি বিদ্বেষপূর্ণ ইশতেহার অনলাইনে পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি হিস্পানিক বা লাতিনো সম্প্রদায়ের লোকজনের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি ডার্কফেল্ডের কাছে একটি কমিউনিটি কলেজ থেকে ঝরে পড়েন। এর আগে, তিনি ফেডারেল আদালতে ঘৃণা-অপরাধের দায় স্বীকার করে ৯৯টি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে থাকা ফেডারেল প্রসিকিউটররাও এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আবেদন তুলে নেয়।
জেলা অ্যাটর্নি মন্টয়া মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে মত দিলেও ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার পর দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৫ বছর বয়সী একজন কিশোরী, কয়েকজন বৃদ্ধ এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন মেক্সিকান নাগরিক।
২০২৩ সালে ক্রুসিয়াস তাঁর ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ ডলারের বেশি দিতে রাজি হয়েছিলেন। তবে তাঁর উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই বলেই জানা গেছে।
নিহত মার্গি রেকর্ডের ছেলে ডিন রেকর্ড বলেন, “ক্রুসিয়াসের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। তবে এখন সময় এসেছে এই বিষয়টির নিষ্পত্তি করার।
আমরা আমাদের প্রিয়জনদের ভালো মানুষ হিসেবে স্মরণ করব। তাঁরা তাঁদের জীবন সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে চেয়েছিলেন। আমাদেরও তেমনটাই করা উচিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস