সেলেনা কুইন্টানিল্লা-পেরেজ: ৩০ বছর পরেও সঙ্গীতের আকাশে উজ্জ্বল এক নক্ষত্র, খুনিকে প্যারোলে মুক্তি দিতে রাজি নয় আদালত।
নব্বইয়ের দশকে টেজান সঙ্গীত জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী শিল্পী ছিলেন সেলিনা কুইন্টানিল্লা-পেরেজ। ১৯৯৫ সালে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল তাঁর অগণিত ভক্তদের মাঝে।
মৃত্যুর এত বছর পরেও, তাঁর গান আজও লাতিন আমেরিকার পরিবারগুলোতে সমানভাবে জনপ্রিয়। সম্প্রতি, তাঁর হত্যাকারী ইয়োলান্ডা সালদিভারের প্যারোলে মুক্তির আবেদন নাকচ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের আদালত।
সেলিনার পরিবার এই সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়েছে এবং তাঁদের বক্তব্যে জানানো হয়েছে, “যদিও সেলিনাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, এই রায় প্রমাণ করে যে ন্যায়বিচার এখনো বিদ্যমান।
আমাদের কাছ থেকে এবং সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ভক্তের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া সুন্দর জীবনটির প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে।”
১৯৯৫ সালের ৩১শে মার্চ, টেক্সাসের একটি মোটেল কক্ষে ইয়োলান্ডা সালদিভার গুলি করে হত্যা করেন সেলিনাকে। ঘটনার সময় সেলিনার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর।
তখন তাঁর প্রথম ইংরেজি ভাষার অ্যালবাম প্রকাশের প্রস্তুতি চলছিল। সালদিভারকে খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
প্যারোলের বিষয়টি মূলত বিবেচনা করা হয় কয়েদির কারাবাসের সময়সীমা এবং তাঁর আচরণের ওপর ভিত্তি করে। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের প্যারোল বোর্ড জানিয়েছে, সালদিভারের ক্ষেত্রে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁর মুক্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
বোর্ডের মতে, সালদিভারের “হিংস্র আচরণ এবং অন্যের জীবনের প্রতি অবজ্ঞা” প্যারোল প্রত্যাখ্যানের মূল কারণ। তাঁর পরবর্তী প্যারোল শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সালের মার্চ মাসে।
সেলিনার গানের জগতে অবদান অবিস্মরণীয়। টেজান, ডান্স-পপ এবং আরএন্ডবি’র মিশ্রণে তাঁর সঙ্গীতশৈলী ছিল অনন্য। তিনি মেক্সিকান-আমেরিকান সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তাঁর ফ্যাশন এবং স্টাইল আজও অনেকের কাছে প্রিয়।
সেলিনার জীবন এবং কর্ম আজও বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হয়। তাঁর নামে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র এবং সিনেমা।
২০১৮ সালে হলিউড ওয়াক অফ ফেম-এ তাঁর নামে একটি তারকা স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালে তাঁর জীবন নিয়ে নির্মিত হয় নেটফ্লিক্সের একটি মিনি-সিরিজ।
এছাড়া, ২০২১ সালে তাঁর সম্মানে ‘ম্যাক’ (MAC) কসমেটিকস-এর একটি সংগ্রহ প্রকাশিত হয়।
সেলিনার স্মৃতি আজও তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে অম্লান। তাঁর গান, তাঁর সংস্কৃতি এবং তাঁর আত্মত্যাগ—সবকিছুই প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
তাঁর অনুরাগী এবং সঙ্গীতপ্রেমীরা চান, সেলিনার জীবনকে উদযাপন করা হোক, তাঁর হত্যাকারীর প্রতি মনোযোগ না দিয়ে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন