ভবিষ্যতের জীবাশ্ম: আমাদের ফেলে আসা আবর্জনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কী বার্তা দেবে?
লক্ষ লক্ষ বছর পরে, যখন মানুষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে, পৃথিবীর বুকে টিকে থাকবে আমাদের ফেলে যাওয়া কিছু চিহ্ন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এগুলোই হবে ভবিষ্যতের জীবাশ্ম—’টেকনফসল’।
আধুনিক সভ্যতার এই টেকনফসলগুলো আসলে কী? প্লাস্টিক বোতল, কলম, কংক্রিটের তৈরি ভবন, মোবাইল ফোন—এগুলো সবই আমাদের তৈরি করা, যা সময়ের সাথে সাথে পাথরের স্তরে মিশে যাবে এবং ভবিষ্যতের ভূতত্ত্ববিদদের কাছে আমাদের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরবে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ লেস্টারের জীবাশ্মবিদ সারা গ্যাবট এবং জান জালাসিউইজ এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের নতুন বই, “ডিসকার্ডেড: হাউ টেকনফসলস উইল বি আওয়ার আলটিমেট লেগ্যাসি”-তে তারা দেখিয়েছেন, কীভাবে মানুষের তৈরি জিনিসগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবে।
তাদের মতে, আগামী দিনের জীবাশ্মগুলো আজকের জীবন্ত জগৎ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে। এগুলো হবে মূলত প্লাস্টিক, পোশাক, এবং অন্যান্য শিল্পজাত দ্রব্য।
গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিক বোতল, ব্যাগ, বলপয়েন্ট কলমের মতো জিনিসগুলো দ্রুত পরিবেশে মিশে যাবে এবং সহজে ক্ষয় হবে না। পোশাকশিল্পও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, কারণ বর্তমানে পোশাক তৈরিতে ব্যবহৃত সিনথেটিক উপাদানগুলো সহজে পচনশীল নয়।
এই কারণে এগুলোও টেকনফসলে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
কিন্তু কীভাবে এই জিনিসগুলো জীবাশ্মে পরিণত হবে? সাধারণত, কোনো বস্তু দ্রুত মাটির নিচে চাপা পড়লে এবং অক্সিজেনের অভাব থাকলে জীবাশ্মে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
আমাদের তৈরি জিনিসগুলি, যেমন প্লাস্টিক, অত্যন্ত টেকসই হওয়ার কারণে খুব সহজেই টিকে থাকতে পারে এবং জীবাশ্মে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, নিউ অরলিন্স বা আমস্টারডামের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত শহরগুলো, যা ধীরে ধীরে সমুদ্রের নিচে চলে যাচ্ছে, সেখানে বিশাল আকারের টেকনফসল তৈরি হতে পারে।
ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা যখন এই টেকনফসলগুলো খুঁজে পাবেন, তখন তারা কি আমাদের সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন? গ্যাবট মনে করেন, তারা হয়তো বুঝতে পারবেন যে এখানে বিশাল একটা আবর্জনার স্তূপ ছিল।
কিছু জিনিস, যেমন মোবাইল ফোন, তাদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য দেবে না। তারা হয়তো বুঝবেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ছিল, কিন্তু এর ব্যবহার সম্পর্কে তাদের ধারণা নাও থাকতে পারে।
তবে সময়ের সাথে সাথে মোবাইল ফোনের বিবর্তন—আগের দিনের বড় আকারের ফোন থেকে স্মার্টফোন—তাদের কাছে একটি কৌতূহল তৈরি করবে।
জালাসিউইজের মতে, কিছু ক্ষেত্রে চমৎকারভাবে সবকিছু সংরক্ষিত থাকতে পারে। যেমন, আমরা এখন এমন অনেক উপাদান ব্যবহার করি, যা অ্যাম্বারের মতো কাজ করে।
তাছাড়া, অক্সিজেনের অভাব রয়েছে এমন পরিবেশে অনেক জিনিস জমা হয়, যা পচন প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।
আমাদের দেশেও, বিশেষ করে ঢাকা ও অন্যান্য শহরগুলোতে, প্লাস্টিক বর্জ্য একটি বড় সমস্যা। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা যদি সচেতন না হই, তাহলে আমাদের বর্তমান কার্যকলাপ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক ভয়ংকর স্মৃতিচিহ্ন রেখে যাবে।
আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে, যাতে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন