মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও (এনপিআর) এবং পাবলিক ব্রডকাস্টিং সার্ভিস (পিবিএস)-এর মতো প্রধান গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর সরকারি অর্থায়ন নিয়ে কংগ্রেসে বিতর্ক চলছে। রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ, বিশেষ করে কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিন, এই সংস্থাগুলোর তহবিল অব্যাহত রাখা উচিত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের অভিযোগ, গণমাধ্যমগুলো পক্ষপাতদুষ্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনপিআর এবং পিবিএস-এর প্রধান কর্মকর্তাদের একটি শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছে, যেখানে তাঁরা স্থানীয় পর্যায়ে তাঁদের সেবার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এই ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং টিকে থাকার লড়াইকে নতুন করে সামনে এনেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অর্থায়নে চলা এনপিআর এবং পিবিএস-এর কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রক্ষণশীল মহলে অসন্তোষ রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, এই গণমাধ্যমগুলো বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে এবং সরকারের সমালোচক।
সম্প্রতি, এই অভিযোগের ভিত্তিতে রিপাবলিকানরা উভয় গণমাধ্যমের সরকারি তহবিল বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। তাদের যুক্তি, করদাতাদের অর্থে পরিচালিত এই সংস্থাগুলোর কোনো প্রয়োজন নেই।
তবে, এই বিতর্কের মধ্যেই জানা গেছে, ২০২৭ সাল পর্যন্ত এনপিআর এবং পিবিএস-এর জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো, এখনই তাদের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু রিপাবলিকানদের এই পদক্ষেপকে তাঁরা তাঁদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
তাই, এই ইস্যুতে তাঁরা তাঁদের সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
এনপিআর এবং পিবিএস কর্তৃপক্ষ তাঁদের কার্যক্রমের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে স্থানীয় পর্যায়ে তাঁদের গুরুত্বের কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, স্থানীয় পর্যায়ের সংবাদ পরিবেশন এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান তৈরিতে তাঁদের জুড়ি নেই।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় রেডিও ও টেলিভিশন স্টেশনগুলো তাঁদের কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে জনগণের সমর্থন চাইছে এবং অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা করছে। তাঁরা বোঝাচ্ছেন, সরকারি তহবিল কমে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে সম্প্রচার কঠিন হয়ে পড়বে।
এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা। বিশেষ করে, যখন সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো কোনো গণমাধ্যমের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তখন তা গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করে।
কারণ, এর ফলে জনগণের তথ্য জানার অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গণমাধ্যম যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে সমাজে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বর্তমানে, ডিজিটাল মিডিয়ার উত্থানের কারণে গণমাধ্যমগুলো নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে যেমন দর্শক বা শ্রোতাদের রুচি বদলাচ্ছে, তেমনই বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা।
এমন পরিস্থিতিতে, সরকারি অর্থায়নে চলা গণমাধ্যমগুলোর টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বিতর্ক, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়।
সরকারি অর্থায়নে চলা গণমাধ্যমগুলো কীভাবে তাদের স্বাধীনতা বজায় রেখে জনগণের কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য পৌঁছে দিতে পারে, তা এই বিতর্কের মাধ্যমে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।