যুক্তরাষ্ট্রে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায়, ইউটাহ অঙ্গরাজ্য তাদের সর্বসাধারণের খাবার পানিতে ফ্লোরাইড মেশানো বন্ধ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি দেশটির ইতিহাসে নজিরবিহীন, কারণ ইউটাহ প্রথম রাজ্য হিসেবে এমন একটি পদক্ষেপ নিল।
ডেন্টিস্ট ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, এর ফলে জনগণের স্বাস্থ্য, বিশেষ করে দাঁতের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হবে।
ফ্লোরাইড দাঁত মজবুত করে এবং ক্ষয় রোধ করে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি দাঁতের এনামেলকে শক্তিশালী করে এবং দাঁতের উপরিভাগে ক্ষতিকারক অ্যাসিডের প্রভাব কমাতে সহায়তা করে।
কিন্তু ইউটাহ রাজ্যের আইনপ্রণেতারা এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন। তাদের মতে খাবার পানিতে ফ্লোরাইড মেশানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া।
রাজ্যের গভর্নর স্পেন্সর কক্স, যিনি নিজেও ফ্লোরাইডবিহীন পরিবেশে বড় হয়েছেন, এই পদক্ষেপকে সরকারের ‘ওষুধ প্রয়োগের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ, অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটির বেশি মানুষ, তাদের খাবার পানিতে ফ্লোরাইড গ্রহণ করে থাকেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
তবে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র, যিনি জলীয় ফ্লোরাইডেশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, ফ্লোরাইড মেশানো পানি তাদের জন্য প্রতিরোধমূলক ডেন্টাল স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র উৎস।
যাদের নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য এই পদক্ষেপ আরও উদ্বেগের কারণ।
অন্যদিকে, ফ্লোরাইডের বিরোধিতা করা ব্যক্তিরা বলছেন, এটি ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দের বিষয়। ইউটাহ রাজ্যের আইনপ্রণেতা স্টেফানি গ্রিসিয়াস এই বিষয়ে বলেছেন, জনগণের স্বাধীনতাকে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, ইউটাহ রাজ্যের ৪৮৪টি জল সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে মাত্র ৬৬টিতে ফ্লোরাইড মেশানো হতো। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জল সরবরাহ ব্যবস্থাটি ছিল সল্ট লেক সিটিতে।
তবে, ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লোরাইডযুক্ত পানি ব্যবহারের দিক থেকে ইউটাহ যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম স্থানে ছিল। এই ঘটনা স্বাস্থ্যখাতে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও আলোচনা ও পর্যালোচনার জন্ম দেবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস