এলোন মাস্কের সরকারি দপ্তর: সাশ্রয়ের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা?
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে সরকারি দপ্তরগুলোতে ‘দক্ষতা’ বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া একগুচ্ছ পদক্ষেপ বর্তমানে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলোর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক।
‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (DOGE) নামে পরিচিত এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারের ব্যয় হ্রাস করার কথা বলা হলেও, এখন প্রশ্ন উঠেছে, এতে কি আদৌ কোনো লাভ হয়েছে, নাকি ক্ষতির পাল্লাটাই ভারী?
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্কের এই দপ্তর বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার সাশ্রয়ের দাবি করেছে।
কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর অর্ধেক তথ্যের কোনো সঠিক প্রমাণ নেই। বাতিল হওয়া বিভিন্ন চুক্তি, অনুদান এবং ইজারা থেকে এই সাশ্রয় হয়েছে বলে জানানো হলেও, বিস্তারিত হিসাব এখনো অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হিসাবের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি, DOGE-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রত্যেক মার্কিন করদাতার প্রায় ১,০৮৬ ডলার সাশ্রয় হয়েছে।
তবে, এই হিসাবের পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কারণ, এই সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে করদাতার সংখ্যাকে ভুলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকৃত করদাতার সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ায়, বাস্তবে এই সাশ্রয়ের পরিমাণ অনেক কম হবে।
এই উদ্যোগের ফলে সরকারের কর্মপরিবেশেও খারাপ প্রভাব পড়েছে। কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে সরকারের রাজস্ব কমে যেতে পারে।
এছাড়া, বিভিন্ন চুক্তি বাতিল এবং কর্মীদের বরখাস্ত করার ফলে আইনি জটিলতাও সৃষ্টি হতে পারে, যা সরকারের জন্য বাড়তি ব্যয়ের কারণ হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, DOGE-এর এই পদক্ষেপগুলো সরকারের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে যারা কাজ হারাচ্ছেন, তাদের পুনর্বাসন এবং নতুন করে কর্মী নিয়োগ করতে গিয়ে সরকারের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে।
এছাড়া, কর্মীদের মনোবল কমে যাওয়া এবং কর্মপরিবেশে অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, DOGE-এর কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করা হয়নি। মাস্ক সাশ্রয়ের কথা বললেও, এর প্রমাণ হিসেবে পর্যাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি।
ফলে, এই উদ্যোগের ফলে কতটা সাশ্রয় হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। এমনকি, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এই সাশ্রয় বাস্তবে রূপ নেওয়াও সম্ভব নয়।
তবে, DOGE-এর কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারি ব্যয়ের বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেন, সরকার অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে, এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, DOGE-এর কার্যক্রমের কারণে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চুক্তি বাতিল এবং কর্মীদের ছাঁটাইয়ের ফলে, ব্যবসায়ীরা এখন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে দ্বিধা বোধ করতে পারেন।
সব মিলিয়ে, ইলন মাস্কের এই সরকারি দপ্তর শেষ পর্যন্ত সরকারের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এমনও হতে পারে যে, এই উদ্যোগ সরকারের সংস্কারের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে আরও বেশি ক্ষতির কারণ হবে।
সরকারি ব্যয় হ্রাসের নামে নেওয়া পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত কতটা কার্যকর হবে, সেটি সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন