মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি আমদানির উপর শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কারণে দেশটির গাড়ি বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গাড়ি ক্রেতাদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, কারণ এর ফলে গাড়ির দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে। খবর অনুযায়ী, অনেক আমেরিকান এখনই গাড়ি কেনার জন্য ডিলারশিপগুলোতে ভিড় করছেন, যাতে তারা বাড়তি দামের হাত থেকে বাঁচতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে শুধু আমদানি করা গাড়ির দামই নয়, বরং আমেরিকাতে তৈরি হওয়া গাড়ির দামও বাড়বে। কারণ, এই গাড়িগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি ফোর্ড, ক্রাইসলার, জিএম অথবা হোন্ডা-র মতো উত্তর আমেরিকায় তৈরি হওয়া গাড়ির দাম ৪,০০০ থেকে ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এমনকি, বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির দাম অন্তত ১২,০০০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
পেনসিলভানিয়ার বাসিন্দা মিগুয়েল কোলোম জানিয়েছেন, তিনি এবং তার স্ত্রী একটি শেভি ইক্যুইনক্স ইভি কেনার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কায় তারা দ্রুত গাড়িটি কিনতে চাচ্ছেন।
তাদের মতে, গাড়ির দাম ১২,৫০০ ডলার পর্যন্ত বাড়লে তাদের পক্ষে সেটি কেনা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে, পুরনো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ নিয়েও অনেকে চিন্তিত। নিউ জার্সির বাসিন্দা রবার্ট ওয়ায়েট তার পুরনো মার্সিডিজ জিএলই-350 বদলে নতুন টয়োটা কিনেছেন।
তিনি জানান, পুরনো গাড়িতে প্রায়ই মেরামতের প্রয়োজন হয়, যা বাড়তি খরচের কারণ। তাই শুল্ক বৃদ্ধির আগেই নতুন গাড়ি কিনে তিনি কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন।
গাড়ি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের জিজ্ঞাসু মনোভাব বেড়েছে, তবে বিক্রি এখনো সেভাবে বাড়েনি। ওয়াশিংটনের একটি টয়োটা ডিলারশিপের জেনারেল ম্যানেজার টম টাটিচ জানান, গ্রাহকরা ভবিষ্যতের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অনেক ক্রেতা এরই মধ্যে গাড়ি বুকিং দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যাতে শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে তারা তাদের পছন্দের গাড়িটি নিশ্চিত করতে পারেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য বিদেশি গাড়ির দাম বাড়াতে উৎসাহিত করছেন, তার যুক্তি হলো এতে আমেরিকান গাড়ি বিক্রি বাড়বে। তবে, এমন পরিস্থিতিতে গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো তাদের উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে।
এর ফলে বাজারে গাড়ির সরবরাহ কমে যাবে এবং দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উইসকনসিনের একটি ডিলারশিপের মালিক ডগ স্কোয়েপ জানান, তাদের কাছে প্রায় ৫০০টি গাড়ি মজুত আছে, যা সম্ভবত দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত চলবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি শুল্ক বহাল থাকে, তাহলে গাড়ির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নতুন গাড়ির দাম ২৫ শতাংশ এবং পুরনো গাড়ির দাম কমপক্ষে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
মোটকথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে গাড়ি বাজারের উপর এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ক্রেতাদের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ, সেই সাথে ব্যবসায়ীরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন