আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর এক নতুন প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমে যেতে পারে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটির মতে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে ৭ মিলিয়ন কম কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে, যা আগেকার পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি এবং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, তারই ফলস্বরূপ এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইএলও এই হিসাব দিয়েছে।
আইএমএফ-এর মতে, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির জিডিপি-র বৃদ্ধি হতে পারে ২.৮ শতাংশ, যা আগে ৩.২ শতাংশ ধরা হয়েছিল।
আইএলও-র বিশ্লেষণ অনুযায়ী, প্রায় ৮৪ মিলিয়ন চাকরি, যা ৭১টি দেশের সঙ্গে জড়িত, সরাসরি বা পরোক্ষভাবে মার্কিন ভোক্তাদের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন চাকরি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোতে রয়েছে ১ কোটি ৩০ লক্ষের বেশি চাকরি।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর কর্মীরা শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আয়ের ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। কারণ, ভবিষ্যতে বাণিজ্য সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলো কী হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বাণিজ্য শুল্ক বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে গাড়ি ও স্টিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ওপর তিনি এই শুল্ক বৃদ্ধি করেছেন।
আগামী ৯ জুলাই তিনি অন্যান্য দেশের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন, যদি না দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে রাজি হয়।
বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি এবং এর অপ্রত্যাশিত প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা অনেক ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আইএলও-র মতে, এমন পরিস্থিতিতে নিয়োগকর্তারা নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে পারেন।
আইএলও-র মহাপরিচালক গিলবার্ট হাউংবো এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা জানি, বিশ্ব অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে। যদি ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বাণিজ্য সংক্রান্ত জটিলতা চলতেই থাকে, তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারে পড়বে।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন