যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে অস্থিরতা, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা। বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য।
আর এই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের মধ্যে শুল্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে আসা কিছু পরিবর্তন এবং এর ফলে দেশটির বন্দরগুলোতে আমদানি কমে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও, কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে আমদানি-নির্ভর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছিল, যা ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যদিও, পরবর্তীতে কিছু শুল্ক কমানো হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি এখনো স্থিতিশীল হয়নি।
আদালতের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে শুল্কের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের এই অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলোতে পণ্য আসার পরিমাণ কমে গেছে।
উদাহরণস্বরূপ, লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরে গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ আমদানি কমেছে। একই চিত্র দেখা গেছে সিয়াটল ও টাকোমার বন্দরগুলোতেও।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। কারণ, তাদের পণ্য সরবরাহ এবং মূল্যের পরিকল্পনা করতে সমস্যা হচ্ছে।
অনেক ব্যবসায়ী এখন পর্যন্ত শুল্কের বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়ায় নতুন করে পণ্য আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক এক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লস অ্যাঞ্জেলেস বন্দরের প্রায় ৪৫ শতাংশ পণ্য আসে চীন থেকে।
পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে গেলেও, তা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৯৬ হাজার কন্টেইনার আসার কথা, যেখানে আগের মাসের শেষ সপ্তাহে এসেছিল ৬৯ হাজার কন্টেইনার।
জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে কন্টেইনারের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬ হাজারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা এখনো ৯.৪ শতাংশ কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের এই অনিশ্চয়তা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে পারে। কারণ, ব্যবসায়ীদের জন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
ইতিমধ্যে, ওয়ালমার্ট, হোম ডিপো এবং টার্গেটের মতো বড় খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছে যে, তারা শুল্কের প্রভাব কমাতে পণ্যের দাম বাড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন এবং শুল্কের উত্থান-পতন বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পখাত কাঁচামালের জন্য আমদানি-নির্ভর।
তাই, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে তা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন