হিলসবোরো ট্র্যাজেডি: পুলিশি তদন্তে কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্বজনরা। ১৯৮৯ সালের ১৫ এপ্রিল, ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের হিলসবোরো স্টেডিয়ামে লিভারপুল ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি ফুটবল ম্যাচের সময় ৯৭ জন দর্শকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলা একটি তদন্ত শেষে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। স্বাধীন পুলিশ আচরণ বিষয়ক দপ্তর (Independent Office for Police Conduct – IOPC) এই তদন্ত পরিচালনা করে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনিয়র কোনো পুলিশ কর্মকর্তা লিভারপুল সমর্থকদের দোষারোপ করে কোনো প্রকার অসদাচরণ করেননি। এই সিদ্ধান্তে নিহতদের পরিবার ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির ঘোষণার পর নিহতদের পরিবারের সদস্যরা একে ‘প্রহসন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের অভিযোগ, ঘটনার আসল সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল, সাউথ ইয়র্কশায়ার পুলিশ তাদের দায় কমানোর জন্য ভুক্তভোগীদের দায়ী করে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেছে।
তদন্তে যদিও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন চিফ সুপারিনটেনডেন্ট ডেভিড ডাকেনফিল্ড। দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বে গাফিলতির কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া, ঘটনার দিন মিথ্যা তথ্য দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া, অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও পরিকল্পনার অভাব এবং ঘটনার পরে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনার পর, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘হিলসবোরো আইন’ প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এই আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
কিন্তু, সেই আইন এখনো আলোর মুখ দেখেনি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতদের স্বজনরা। তাদের মতে, সরকার এই ট্র্যাজেডিকে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ব্যবহার করছে।
এদিকে, বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার এই ঘটনার বার্ষিকীর দিনেই আইনটি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় নিহতদের পরিবারগুলো হতাশ হয়েছে।
স্টারমারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা হিলসবোরো আইন প্রণয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং খুব শীঘ্রই পরবর্তী পদক্ষেপগুলো জানানো হবে।
হিলসবোরো ট্র্যাজেডির শিকার হওয়া পরিবারগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা হোক। তারা চান, ঘটনার প্রকৃত কারণ উন্মোচন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
তাদের এই ন্যায়বিচারের লড়াই এখনো অব্যাহত আছে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান