শিরোনাম: সুইডেনে গ্যাং ক্রাইসিস: ফুটবল কি তরুণদের নতুন দিশা?
সুইডেনে গ্যাং-সংক্রান্ত অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, যা দেশটির যুবকদের জীবনকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করছে। বিভিন্ন শহরের অনগ্রসর এলাকাগুলোতে দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং সামাজিক সুযোগের অভাবের কারণে কিশোর ও তরুণরা অপরাধ জগতে আকৃষ্ট হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, সুইডেনের একটি অংশে ফুটবল খেলার মাধ্যমে তরুণদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস চলছে।
উত্তরের শহর আপসালায়, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে শান্ত পরিবেশ বিদ্যমান, সেখানেও গ্যাং কালচার বিস্তার লাভ করেছে। এখানকার শহরতলিতে, বিশেষ করে গটসুন্দা নামক এলাকায়, কিশোর গ্যাং সদস্যদের সংখ্যা বাড়ছে। এই এলাকার তরুণরা প্রায়ই সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং দ্রুত অপরাধের দিকে ঝুঁকে যায়।
গটসুন্দাতে, রবার্ট ওয়ায়ারহ্যাগ নামের একজন ধর্মযাজক, যিনি একসময় স্থানীয় একটি ফুটবল দলের হয়ে খেলেছেন, তিনি প্রতি শনিবার রাতে “নৈশ ফুটবল” আয়োজন করেন। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো– ঝুঁকিপূর্ণ তরুণদের খেলাধুলার মাধ্যমে একত্রিত করা এবং তাদের গ্যাং জীবন থেকে দূরে রাখা। ওয়ায়ারহ্যাগ মনে করেন, খেলাধুলা তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করে এবং তাদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। তিনি বলেন, “ফুটবল খেলার মাধ্যমে আমরা তাদের একটি সুস্থ জীবন দিতে চেষ্টা করি, যেখানে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে পারে।
ফুটবল খেলার পাশাপাশি, এই কর্মসূচিতে পুলিশের কর্মকর্তাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়, যাতে তরুণদের সঙ্গে তাদের একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। অনেক তরুণের পুলিশের প্রতি বিরূপ ধারণা থাকে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে, কর্তৃপক্ষ এবং যুবকদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় ফুটবল খেলোয়াড়রাও। সুইডেনের অনূর্ধ্ব-২১ দলের খেলোয়াড় জোয়াকিম পারসন এখানকার তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করেন। তিনি তাদের বলেন, “কখনো হাল ছাড়বে না। তোমরা যদি কোনো কিছুতে সফল হতে চাও, তবে লেগে থাকতে হবে।
এই প্রকল্পের সুফলও মিলছে। “নৈশ ফুটবল”-এর মাধ্যমে অনেক তরুণ গ্যাংয়ের জীবন থেকে দূরে থাকতে পেরেছে এবং তাদের জীবন নতুন পথে মোড় নিয়েছে। এদের মধ্যে একজন, ১৮ বছর বয়সী আব্দুলরাউফ আলচাইয়েব (আবুদি), যিনি প্রথম বিভাগের একটি ক্লাবে খেলেন এবং সিরিয়ার অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ফুটবল আমাকে খারাপ কাজ থেকে দূরে রেখেছে এবং অনেক তরুণকে সাহায্য করেছে।
সুইডিশ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৬২ হাজার মানুষ অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত অথবা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে, গত কয়েক বছরে অল্পবয়সী অপরাধীর সংখ্যাও বেড়েছে, যাদের অনেকেই খুনের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এই সমস্যা মোকাবেলায়, সরকার এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন একসঙ্গে কাজ করছে এবং তরুণদের জন্য খেলাধুলা ও অন্যান্য ইতিবাচক কার্যক্রমের ওপর জোর দিচ্ছে।
সুইডেনের এই অভিজ্ঞতা থেকে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোও শিক্ষা নিতে পারে। খেলাধুলা, বিশেষ করে ফুটবল, তরুণদের মধ্যে শৃঙ্খলা, দলবদ্ধতা এবং ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে, তাদের অপরাধের জগৎ থেকে দূরে রেখে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন