দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে এক সময়ের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন ইউন সুক ইওল। দ্রুতগতিতে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করলেও তার পতনও হয় দ্রুত। এক বছরের মধ্যেই তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তবে বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মাত্র চার মাসের মাথায় তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। খবরটি দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ইউন সুক ইওলের রাজনৈতিক জীবন ছিল বেশ সংক্ষিপ্ত। তবে তার আগে, প্রায় ২৬ বছর ধরে তিনি একজন প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ে তিনি কঠোর ও আপোষহীন একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও তিনি শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, যা তাকে সকলের কাছে পরিচিত করে তোলে। ২০১৩ সালে, তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন, যিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনার পর তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। পরবর্তীতে, ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, উদারপন্থী প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন ইউন সুক ইওলকে সিউল প্রসিকিউটর অফিসের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউন সুক ইওলের এই দ্রুত পতনের মূল কারণ ছিল তার একগুঁয়েমি ও নমনীয়তার অভাব। বিরোধীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তিনি প্রায়ই সমস্যায় পড়েছেন। তাছাড়া, তার বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সামরিক আইন জারির ঘোষণা। যদিও ইউন সুক ইওল দাবি করেছিলেন, বিরোধীদের মোকাবিলা এবং তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি ছিল রাজনৈতিক কৌশল। এর ফলস্বরূপ, বিরোধী দলগুলো দ্রুত তার এই ডিক্রি বাতিল করে এবং তাকে অভিশংসিত করে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ইউন সুক ইওল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিত্রতা জোরদারের চেষ্টা করেন। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে তার সরকারের মেয়াদে বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত লেগেই ছিল।
ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ বিরোধী দলগুলো তার সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনে এবং অনেক কর্মকর্তাকে অভিশংসিত করার চেষ্টা করে। ইউন সুক ইওল প্রায় ৪০টির মতো বিরোধী দলের আনা বিল আটকে দেন।
সামরিক আইন জারির ঘোষণার পেছনে অনেকে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবেও দেখছেন। তার স্ত্রী, কিম কিয়ন-হির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
এর মধ্যে ছিল উপহার হিসেবে বিলাসবহুল ব্যাগ গ্রহণ এবং শেয়ার বাজারের কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে।
বর্তমানে, ইউন সুক ইওলের এই অপসারণ দেশটির রাজনীতিতে একটি নতুন মোড় এনে দিয়েছে। তার এই দ্রুত পতন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)