গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতবিরোধ, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে অনড় ডেনমার্ক।
আর্কটিক অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব সম্পন্ন দেশ গ্রিনল্যান্ড। ডেনমার্কের অর্ধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটির উপর যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ নিয়ে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন গ্রিনল্যান্ড সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছেন, যেখানে তিনি সরাসরি বলেছেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতেও একটি দেশ অন্য কোনো দেশের অঞ্চল দখল করতে পারে না।
ফ্রেডেরিকসেনের এই সফরের আগে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স গ্রিনল্যান্ডের একটি সামরিক ঘাঁটিতে যান। সেখানে তিনি ডেনমার্কের বিরুদ্ধে গ্রিনল্যান্ডে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না করার অভিযোগ তোলেন। অন্যদিকে, ফ্রেডেরিকসেন ডেনমার্ককে একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে তুলে ধরে এই অভিযোগের বিরোধিতা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ডেনমার্ক ন্যাটো জোটের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং তারা সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থেকেছে।
ফ্রেডেরিকসেন বলেন, “আমাদের মিত্রদের মধ্যে যদি বিভেদ সৃষ্টি হয়, তবে তা আমাদের প্রতিপক্ষের সুবিধা করে দেবে। আমি এমন কিছু হতে দিতে চাই না।” তিনি আরও যোগ করেন, “যখন আপনারা আমাদের ব্যবসায়ীদের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে বলেন, তখন তারা করে। যখন আমরা প্রতিরক্ষা খাতে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করি, আমরা তাই করি। যখন আপনারা আর্কটিকে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেন, আমরা একমত হই। কিন্তু যখন আপনারা ডেনমার্ক রাজ্যের একটি অংশ নিজেদের করে নিতে চান, এমনকি আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রের কাছ থেকে চাপ ও হুমকির সম্মুখীন হতে হয়, তখন আমরা কী বিশ্বাস করব?”
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আটলান্টিকজুড়ে যে বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, তা হলো—আপনি অন্য কোনো দেশকে, এমনকি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার যুক্তিতেও, দখল করতে পারেন না।” তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আর্কটিকে নিরাপত্তা বাড়াতে চায়, তবে তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
এদিকে, গ্রিনল্যান্ডের রাজনৈতিক দলগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রহের প্রেক্ষাপটে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা অর্জনের দিকে আরও বেশি ঝুঁকছে। তাদের মধ্যে একটি নতুন জোট সরকার গঠনের বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের এই স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা এবং যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহ ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স এক সাক্ষাৎকারে আবারও অভিযোগ করেন যে ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডের অবকাঠামো এবং নিরাপত্তায় “সত্যিই কম বিনিয়োগ করেছে”। তিনি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মূল বক্তব্য ছিল, “এটি আমাদের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমরা যে কোনো মূল্যে আমেরিকার স্বার্থ রক্ষা করব।”
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস