আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাভিয়ের মেইলেইয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের চেষ্টা ভেস্তে দিল সিনেট। বৃহস্পতিবার দেশটির সিনেটে প্রেসিডেন্ট মেইলেইয়ের মনোনীত দুই প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। এই ঘটনায় আর্জেন্টিনার রাজনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে, প্রেসিডেন্ট মেইলেই কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ডিক্রির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের শূন্য পদ পূরণের চেষ্টা করেন। তিনি সংবিধানের একটি ধারা উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, আইনসভার গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় তিনি এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। তবে বিরোধীরা এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে একে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে অভিহিত করেন। তাদের মতে, কংগ্রেসের বিরতির সময় বিচার বিভাগীয় নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত।
এই বিতর্কের মূল কারণ ছিল, প্রেসিডেন্ট মেইলেইয়ের অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে সুপ্রিম কোর্টের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি এমন বিচারপতি নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন, যারা তার সংস্কারের পক্ষে রায় দেবেন। কিন্তু সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। মেইলেইয়ের দল সিনেটের ৭২টির মধ্যে মাত্র ৭টি আসনে জয়ী হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের মনোনীত দুই প্রার্থীকে নিয়ে বিতর্ক ছিল তুঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন, অ্যারিয়েল লিহো, এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি অর্থ পাচার করেছেন এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন। অপর প্রার্থী ম্যানুয়েল গার্সিয়া-মানসিয়াকে বামপন্থী পেরোনিজ বিরোধী দল সামাজিক বিষয়গুলোতে রক্ষণশীলতার কারণে বিরোধিতা করে।
সিনেটে ভোটাভুটিতে লিহোর মনোনয়ন ৪৩ ভোটে বাতিল হয়, পক্ষে ভোট পড়েছিল মাত্র ২৭টি। অন্যদিকে গার্সিয়া-মানসিলার মনোনয়ন বাতিল হয় ৫১ ভোটের ব্যবধানে, যেখানে তার পক্ষে ভোট পড়েছিল ২১টি।
এই ফলাফলের পর প্রেসিডেন্ট মেইলেই এক বিবৃতিতে সিনেটের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক কারণে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সুপ্রিম কোর্টের দুটি পদ খালি রাখা বিচার বিভাগের কাজে বাধা দেওয়ার শামিল। মেইলেই তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন বলেও জানান।
অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের আমেরিকা অঞ্চলের উপ-পরিচালক জুয়ান প্যাপিয়ার বলেছেন, “আর্জেন্টিনার গণতন্ত্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস