গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৫ ফিলিস্তিনি ত্রাণকর্মীর মরদেহ পরীক্ষা করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। তাদের শরীরে পাওয়া আঘাতগুলো দেখে মনে হচ্ছে, খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যা মৃত্যুদণ্ডের মতো।
সম্প্রতি রাফাহ শহরে ইসরায়েলি হামলায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিহতদের মধ্যে অনেকের শরীরে গুলির ক্ষত ছিল সুনির্দিষ্ট এবং ইচ্ছাকৃতভাবে করা।
একটি ক্ষেত্রে, গুলি করা হয়েছে সরাসরি একজনের মাথায়, অন্যজনের বুকে এবং তৃতীয় ব্যক্তির শরীরে ছয় থেকে সাতটি গুলি করা হয়।
মরদেহগুলো পচে যাওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন হলেও, প্রাথমিক বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয়, তাদের হত্যা করা হয়েছে দূর থেকে নয়, বরং খুব কাছ থেকে গুলি করে।
গত ২৩শে মার্চ, রাফাহ শহরের তাল আল-সুলতান এলাকায় ফিলিস্তিনের ত্রাণকর্মীরা একটি উদ্ধার অভিযানে গিয়েছিলেন।
তখনই ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের শিকার হন তারা।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি) ৯ জন কর্মী, ৬ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মী এবং জাতিসংঘের একজন কর্মচারী।
হামলার পর, তাদের মরদেহ বালুচাপা অবস্থায় পাওয়া যায়, যা একটি গণকবরের মতো ছিল বলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক দপ্তর (ওসিএইচএ) জানায়।
এখনও একজন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী নিখোঁজ রয়েছেন।
প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইউনেস আল-খতিব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই ঘটনাকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তিনি জানান, ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে কিছু ত্রাণকর্মীর মধ্যে হিব্রু ভাষায় কথোপকথন শোনা গিয়েছিল, যা থেকে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত কিছু কর্মী ইসরায়েলি হেফাজতে জীবিত ছিলেন।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, উদ্ধারকারী দলের অ্যাম্বুলেন্সে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের নয় জন যোদ্ধা ছিল।
যদিও তারা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এই হত্যাকাণ্ডকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করে এর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় চলমান যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪০৮ জন মানবিক সাহায্যকারী নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৮০ জন জাতিসংঘের কর্মী।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা