শিরোনাম: ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলায় ছিন্নভিন্ন পরিবার, রমজানে শোকের মাতম
সানা, ইয়েমেন – পবিত্র রমজান মাসের সন্ধ্যায়, যখন মুসলমানরা তাদের উপবাস ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই আকাশ থেকে নেমে আসে বিভীষিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানার একটি আবাসিক এলাকায় নারী ও শিশুদের সহ একটি পরিবারের ১২ জন নিহত হয়। শুধু তাই নয়, বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয় প্রতিবেশী দুটি শিশু, যাদের জীবন এখনও শঙ্কার মধ্যে।
ঘটনাটি ঘটেছিল ১৫ই মার্চ তারিখে। নিহত আল-জেইনি পরিবারের সদস্যরা তাদের বাড়িতে ইফতারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক তখনই বিকট শব্দে সবকিছু যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আল-জেইনি পরিবারের সদস্যরা। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
আহত শিশুদের প্রতিবেশী মা খাওলা* (প্রকৃত নাম গোপন রাখা হয়েছে) ঘটনার আকস্মিকতায় দিশেহারা হয়ে পড়েন। তার দুই ছেলে, আট বছর বয়সী উসামা এবং ছয় বছর বয়সী মুস্তাফা, বাড়ির বাইরে খেলছিল। বোমা হামলার শব্দে তিনি ছুটে গিয়ে দেখেন, তার সন্তানেরা গুরুতর আহত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।
“আমার চোখের সামনে সবকিছু শেষ হয়ে গেল,” কান্নাজড়িত কণ্ঠে খাওলা বলেন। “আমি আমার ছেলেদের জন্য চিৎকার করছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি।” ভাগ্যক্রমে, ছেলেদের আঘাত গুরুতর না হলেও, তারা এখনো সেই রাতের বিভীষিকা ভুলতে পারেনি। তারা প্রতিনিয়ত জানতে চায়, আর কোনো বোমা পড়বে কিনা।
এই হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি ছিল, এই হামলা চালানো হয়েছে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর, যারা লোহিত সাগরে ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছিল। তবে এই হামলায় বেসামরিক লোকজনের হতাহতের ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই হামলায় শুধু আল-জেইনি পরিবারই ধ্বংস হয়ে যায়নি, বরং পুরো এলাকার মানুষের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন, আবার অনেকে আহত হয়েছেন। মার্কিন বিমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আম্মার মোহাম্মদ* (প্রকৃত নাম গোপন রাখা হয়েছে) জানান, তিনি ইফতারের জন্য আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই বিকট শব্দে সবকিছু কেঁপে ওঠে। তিনি যখন জ্ঞান ফিরে পান, তখন দেখেন আল-জেইনিদের বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তিনি দ্রুত ছুটে যান এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন।
এই ঘটনার পর, এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই ধরনের হামলা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়, যেখানে নিরীহ মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা, ইগাব-এর সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত।