বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর, নারী ফুটবলের নতুন দিগন্ত? যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ২০৩১ এবং ২০৩৫ সালের আসর বসতে যাচ্ছে। খবরটি একদিকে যেমন আনন্দের, কারণ এই দেশগুলোতে নারী ফুটবলের জনপ্রিয়তা অনেক, তেমনি উদ্বেগেরও কারণ আছে।
ফিফা (FIFA) এই দুটি দেশকে স্বাগতিক হিসেবে বেছে নেওয়ায় অনেক দেশের নারী ফুটবল দলগুলির বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ কমে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে নারী ফুটবল দলগুলির সমর্থক গোষ্ঠী বেশ বড়। আধুনিক স্টেডিয়ামগুলোতে খেলা উপভোগ করার মতো অনেক সুবিধা রয়েছে।
এই দেশগুলো নারী ফুটবলের উন্নয়নে অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। তবে, প্রশ্ন হলো, বিশ্বকাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না কেন?
আফ্রিকা মহাদেশে এখনো পর্যন্ত একবারও বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়নি। এমনকি, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে চীন ছাড়া আর কোনো দেশ নারী বিশ্বকাপের আয়োজন করেনি।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো (Gianni Infantino) যখন ঘোষণা করলেন যে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যৌথভাবে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করবে, তখন অনেকের মনেই হতাশা জেগেছে। কারণ, এর ফলে অন্যান্য দেশগুলোতে, বিশেষ করে যেখানে নারী ফুটবল এখনো সেভাবে পরিচিতি পায়নি, সেখানে খেলাটির প্রসারের সুযোগ কমে যাবে।
খেলাধুলায় ভালো সুযোগ-সুবিধা এবং আধুনিক স্টেডিয়াম থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড় এবং দর্শকদের জন্য উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে, টুর্নামেন্টের আকর্ষণ বাড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো জায়গায় খেলা হলে, যেখানে নারী ফুটবল প্রেমীর সংখ্যা বেশি এবং বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহী, সেখানকার পরিবেশ খেলোয়াড়দের জন্য অনেক বেশি অনুপ্রেরণাদায়ক হবে।
তবে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, উন্নত দেশগুলোতে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলে, এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের নারী ও কিশোরীরা খেলাটির প্রতি আকৃষ্ট হবে। কিন্তু সবাই যদি বিশ্বকাপ আয়োজনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তবে নিঃসন্দেহে তা হতাশাজনক।
কারণ, এর ফলে অন্যান্য দেশের ফুটবল ফেডারেশন এবং সরকারগুলোর নারী ফুটবলকে গুরুত্ব দেওয়ার মানসিকতার অভাব প্রকাশ পায়।
২০২৭ সালের নারী বিশ্বকাপ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা দক্ষিণ আমেরিকার জন্য একটি বিশাল সুযোগ। এছাড়া, ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপও দারুণ সফল হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১১ সালের পর ২০৩১ সালে আবার বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ প্রথম নারী বিশ্বকাপ তারা ১৯৯১ সালে জিতেছিল।
এছাড়া, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপেও তারা সফলভাবে আয়োজন করেছিল। তবে, একই দেশ বারবার বিশ্বকাপ আয়োজন করলে, অন্য দেশগুলোর তুলনায় তাদের সুবিধা আরও বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে যেখানে গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, সেখানে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
যুক্তরাজ্যেও অনেক সমস্যা রয়েছে, বিশেষ করে সেখানকার দুর্বল পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা যেতে পারে।
২০৩৫ সালের মধ্যে নারী ফুটবলের উন্নতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, যুক্তরাজ্যে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন হলে, নর্থ আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের মতো অঞ্চলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এখানকার স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে নিউ ট্র্যাফোর্ড, বার্মিংহামের প্রস্তাবিত স্পোর্টস কোয়ার্টারে অবস্থিত একটি ৬০,০০০ আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়াম, সেন্ট জেমস পার্ক অথবা নিউক্যাসল স্টেডিয়াম এবং ওয়েক্সহ্যামের রেসকোর্স গ্রাউন্ড অন্যতম। এই স্টেডিয়ামগুলো খেলোয়াড়দের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা যোগাবে।
সব মিলিয়ে, ২০৩১ ও ২০৩৫ সালের বিশ্বকাপ নারী ফুটবলের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে, অন্য দেশগুলোকে আরও বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।
তথ্য সূত্র: The Guardian