ঐতিহ্য আর নিরাপত্তার এক দোলাচলে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা, গ্র্যান্ড ন্যাশনাল। ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর বাজি ধরা হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ, সেই সঙ্গে থাকে লক্ষ লক্ষ দর্শকের উন্মাদনা। তবে, এই জনপ্রিয়তার মাঝে প্রতিযোগিতাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
একদিকে যেমন রেসের আকর্ষণ ধরে রাখতে চান আয়োজকরা, তেমনই ঘোড়ার নিরাপত্তা নিয়েও তারা যথেষ্ট সচেতন।
প্রতি বছর গ্র্যান্ড ন্যাশনাল-এর দিকে তাকিয়ে থাকে সারা বিশ্বের ক্রীড়ামোদী মানুষ। ঐতিহ্যপূর্ণ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৩৪টি ঘোড়া।
শুধু ব্রিটেনে এর দর্শক সংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ, আর বাজি ধরা অর্থের পরিমাণ ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি।
টাকার অঙ্কে হিসাব করলে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার সমান! কিন্তু এই বিপুল উৎসাহের মাঝেও আয়োজকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
কারণ, প্রতিযোগিতার আকর্ষণ ধরে রাখতে গিয়ে প্রায়ই তারা বিতর্কের মুখে পড়েন।
আয়োজকদের মূল লক্ষ্য হলো ঘোড়দৌড়টিকে আরও নিরাপদ করা।
সে কারণে, দৌড়ের নিয়মকানুন এবং কাঠামোতে আনা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। যেমন, ফেন্সগুলোর উচ্চতা কমানো হয়েছে এবং প্রতিযোগিতায় ঘোড়ার সংখ্যাও কমানো হয়েছে।
এই পরিবর্তনের ফলে একদিকে যেমন দৌড়ের বিপদ কিছুটা কমেছে, তেমনই অনেকে মনে করেন, এর ফলে প্রতিযোগিতার আসল আকর্ষণ কমে যাচ্ছে।
গত বছর কোনো ঘোড়া আহত না হওয়ায় এবং কোনো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটায় অনেকে একে ‘নিরাপদ গ্র্যান্ড ন্যাশনাল’ বলেও অভিহিত করেছেন।
তবে, এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় প্রযুক্তির সাহায্য নিতে শুরু করেছেন আয়োজকরা।
ঘোড়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ‘স্লিপ’ নামের একটি বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ঘোড়ার শরীরের কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে তা চিহ্নিত করতে পারে।
এছাড়াও, দৌড়ের সময় ঘোড়ার হৃদস্পন্দন এবং অন্যান্য শারীরিক অবস্থা নিরীক্ষণের জন্য পরিধানযোগ্য ডিভাইস ব্যবহারেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এই বিষয়ে জকি ক্লাব-এর প্রতিনিধি ডিকন হোয়াইট বলেন, “আমরা সবসময় চেষ্টা করি একটি আকর্ষণীয় এবং সেরা দৌড় আয়োজন করতে।
প্রত্যেক গ্র্যান্ড ন্যাশনাল-এর পর আমরা পর্যালোচনা করি, কোথায় ভালো হয়েছে, আর কোথায় হয়নি।
দৌড়টিকে আরও নিরাপদ করতে আমরা প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে পিছপা হবো না।”
গ্র্যান্ড ন্যাশনাল-এর জনপ্রিয়তা এখনো আকাশচুম্বী।
তবে, প্রতিযোগিতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে নিরাপত্তা এবং ঐতিহ্যের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষার ওপর।
একদিকে যেমন দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে, তেমনই ঘোড়াগুলোর জীবনকেও দিতে হবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গ্র্যান্ড ন্যাশনাল কতটুকু সফল হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান