থেসালোনিকি: গ্রিসের রন্ধনশৈলীর শহর, যা আপনার ঘুরে আসা উচিত।
ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গ্রিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হল থেসালোনিকি। শুধু ঐতিহাসিক স্থাপত্য আর সুন্দর সমুদ্র সৈকতের জন্যই নয়, বরং এই শহরের রন্ধনশৈলীও বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত।
২০২১ সালে ইউনেস্কো এটিকে ‘গ্যাস্ট্রোনমি সিটি’ বা রন্ধনশৈলীর শহর হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। যারা খাবারের স্বাদ নিতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য থেসালোনিকি একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
এই শহরের খাদ্য সংস্কৃতির ইতিহাস সুপ্রাচীন। খ্রিস্টপূর্ব ৩১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শহরটি ম্যাসেডোনিয়ান, রোমান, বাইজেন্টাইন এবং অটোমান সাম্রাজ্যের দ্বারা শাসিত হয়েছে।
বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মানুষেরা তাদের সংস্কৃতি, মশলা এবং রান্নার পদ্ধতি নিয়ে এসেছিল, যা থেসালোনিকির খাদ্যভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এখানকার খাদ্য ঐতিহ্যের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত।
থেসালোনিকির খাদ্য অভিজ্ঞতার কেন্দ্রবিন্দু হল স্থানীয় বাজারগুলি। এখানকার পুরনো বাজার কাপানি-তে গেলে মনে হবে যেন এক ভিন্ন জগৎ।
সরু পথ, যেখানে সারিবদ্ধ দোকানগুলোতে নানান জিনিস সাজানো থাকে। টাটকা সবজি, ফল, মাছ, মাংস – সবই যেন উপচে পড়ছে।
স্থানীয়রা এখানে আসেন তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে, আর পর্যটকদের জন্য এটি একটি দারুণ অভিজ্ঞতা। বাজার থেকে কেনা তাজা উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় এখানকার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো।
থেসালোনিকির সকাল শুরু হয় ‘বোগাতসা বান্টিস’-এর দোকানে, যেখানে তৈরি হয় বিখ্যাত ‘বোগাতসা’। এটি এক প্রকার ক্রিমি কাস্টার্ড দিয়ে ভরা, কুড়মুড়ে, বাটারযুক্ত ফিলো পেস্ট্রি।
অনেকে এটিকে “স্কিটা” হিসেবেও পছন্দ করে, যেখানে কোনো পুর থাকে না। সকালের নাস্তার জন্য এটি খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও, ‘কুলুরিয়া’ নামের তিলের বীজ দিয়ে তৈরি রুটি এখানকার আরেকটি পরিচিত খাবার।
শহরের পুরনো এলাকা, আনো পোলি-তে রয়েছে অনেক ঐতিহ্যবাহী রেস্টুরেন্ট। এখানকার ‘টসিনারী’ নামক একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টে স্থানীয় খাবার ‘মেজেদেস’ পরিবেশন করা হয়।
ভাজা সবজি, গ্রিক সালাদ এবং সুভ্লাকির মতো নানান পদ এখানে উপভোগ করা যায়। এখানকার পরিবেশও বেশ আকর্ষণীয়, যা পুরনো দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
থেসালোনিকির স্থানীয় পনির, তাজা সামুদ্রিক খাবার এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল ও সবজির স্বাদ সত্যিই অসাধারণ। এখানকার লোকেরা তাদের খাবারের উপকরণ সম্পর্কে খুবই সচেতন।
তারা সবসময় স্থানীয় এবং তাজা উপাদান ব্যবহার করতে পছন্দ করে।
রাতের বেলা এখানকার ‘লাদাদিকা’ এলাকায় গেলে অন্যরকম এক দৃশ্য চোখে পড়ে। এক সময়ের নিষিদ্ধ পল্লী, এখন রাতের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
রাস্তার ধারে রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে মানুষজন গল্প করে, আর লাইভ মিউজিকের আওয়াজ শোনা যায়। এখানকার একটি জনপ্রিয় ডেজার্ট হল ‘কাজান দিপি’।
দুধ ও ক্যারামেলের মিশ্রণে তৈরি এই ডেজার্টটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সময় থেকে প্রচলিত।
থেসালোনিকি, শুধু একটি শহর নয়, এটি একটি সংস্কৃতির মিলনস্থল। এখানকার খাবার, সংস্কৃতি আর মানুষের জীবনযাত্রা – সবকিছুই একে অপরের সঙ্গে জড়িত।
যারা খাদ্যরসিক এবং নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য থেসালোনিকি একটি আদর্শ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক