ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করা হলে তা নিরাপদ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের শীর্ষ জ্বালানি কর্মকর্তা। বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা এই কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন তিনি।
ইউক্রেনের বৃহত্তম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পেত্রো কোতিন এক সাক্ষাৎকারে জানান, কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার আগে বেশ কিছু বড় ধরনের সমস্যা সমাধান করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত শীতলীকরণ জল সরবরাহ, জনবল সংকট এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
কোটিন বলেন, রাশিয়ার সেনারা যদি এলাকাটি থেকে সরে যায় এবং খনি মুক্ত ও সামরিকীকরণ বন্ধ করা যায়, তাহলে ইউক্রেন দুই মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে এটি পুনরায় চালু করতে পারে। তবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পক্ষে এটি চালু করা প্রায় অসম্ভব।
জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে কোতিন আরও জানান, ছয়টি চুল্লি পুনরায় চালু করতে ইউক্রেনের পারমাণবিক নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে সম্মত হওয়া ২৭টি নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে চুল্লীর কোরগুলোতে পারমাণবিক জ্বালানির পরীক্ষা করাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, কারণ সেগুলোর ডিজাইন মেয়াদ ছয় বছর পার হয়ে গেছে।
এদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই কেন্দ্রটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় এবং উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে এটি পুনরায় চালু করবে। রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটমের প্রধান অ্যালেক্সি লিখাচোভ ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিলেন, সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূল হলে কেন্দ্রটি চালু করা হবে।
অন্যদিকে, এই কেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও এই সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করা হচ্ছে।
কোটিনের মতে, রাশিয়ার বাহিনী কেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করলে ইউক্রেন তা গ্রহণ করবে না। এছাড়া, কেন্দ্রটি চালু করতে হলে তিনটি অতিরিক্ত ৭৫০ কিলোভোল্টের উচ্চ-ভোল্টেজ লাইন পুনরায় স্থাপন করতে হবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় এবং চারটি উচ্চ-ভোল্টেজ লাইনের মধ্যে তিনটি এখন রাশিয়ার দখলে থাকা এলাকা থেকে আসছিল। কোতিন আরও বলেন, “তারা নিজেরাই লাইনগুলো ধ্বংস করেছে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যাপ্ত শীতলীকরণ জলের অভাবে কেন্দ্রটিতে একটি পাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে হবে। কারণ, জুন ২০২৩-এ রাশিয়ান সেনাদের দ্বারা নিপ্রো নদী থেকে প্রয়োজনীয় জল সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত নোভা কাখোভকা বাঁধটি ধ্বংস করা হয়েছিল।
সম্প্রতি, কিয়েভের পূর্বাঞ্চলে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একজনসহ দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও, রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুমি’র কাছে একটি সীমান্ত গ্রাম দখলের খবর পাওয়া গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে রাশিয়া ১,৪৬০টির বেশি গাইডেড এয়ার বোমা, প্রায় ৬৭০টি আক্রমণাত্মক ড্রোন এবং ৩০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান