ক্রিপ্টোকারেন্সি: পর্দার আড়ালে নয়, এবার বাস্তব জীবনেও অপরাধ বাড়ছে
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) জনপ্রিয়তা দ্রুত বেড়েছে। ডিজিটাল এই মুদ্রা একদিকে যেমন বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত খুলেছে, তেমনই এর সঙ্গে বাড়ছে অপরাধের প্রবণতাও।
উদ্বেগের বিষয় হলো, এই অপরাধগুলো এখন আর কেবল কম্পিউটার স্ক্রিনের ভেতরে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা বাস্তব জীবনেও সহিংস রূপ নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জেরে অপহরণ, নির্যাতন এবং শারীরিক হামলার ঘটনা বাড়ছে।
নিউইয়র্কের একটি ঘটনায়, কয়েকজন ব্যক্তি একজন ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীকে তার বিটকয়েন পাসওয়ার্ড বের করার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্যারিসে, মুক্তিপণের জন্য এক ব্যক্তির আঙুল কেটে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
কানেকটিকাটে, একটি দম্পতিকে অপহরণ করে মারধর করা হয় এবং তাদের একটি ভ্যানে বন্দী করে রাখা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং এর দুর্বল নিয়ন্ত্রক কাঠামোর সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন গ্রিফিন, যিনি আর্থিক অপরাধ নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এই ধরনের শারীরিক সহিংসতা ক্রিপ্টো কার্যকলাপের একটি স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ। যেখানে অন্য অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিনীতির বাইরে কিছু করার সুযোগ থাকে না, সেখানে যেন এটি খেলার একটা অংশ।”
এই ধরনের অপরাধের পেছনে মূল কারণগুলো হলো ক্রিপ্টোকারেন্সির বিশাল আর্থিক সম্ভাবনা, দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, এবং লেনদেন সনাক্ত করার জটিলতা।
অপরাধীরা মনে করে, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে অপরাধ করলে সহজে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।
এছাড়াও, অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্যের সহজলভ্যতা এবং সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের সম্পদের প্রদর্শনের কারণে ক্রিপ্টো হোল্ডারদের চিহ্নিত করাও সহজ হয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সম্প্রতি তাদের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ইন্টারনেট-সংক্রান্ত অপরাধের শিকার হয়ে মানুষ প্রায় ১৬.৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৩৩% বেশি।
এর মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট ক্ষতির পরিমাণ ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
ফ্রান্সেও ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা বাড়ছে।
সম্প্রতি, এক ক্রিপ্টো উদ্যোক্তার বাবাকে অপহরণ করা হয় এবং তার ছেলের কাছে মুক্তিপণ চেয়ে বাবার একটি আঙুল কেটে ফেলার ভিডিও পাঠানো হয়।
এছাড়া, প্যারিসের বাইরে মুখোশ পরা কিছু লোক একটি ভ্যানে করে বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম Paymium-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও পিয়েরে নোজাতের মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল, তবে স্থানীয় এক দোকানদারের হস্তক্ষেপে তারা ব্যর্থ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি এখন মূলধারায় প্রবেশ করেছে, ফলে শারীরিক হুমকি ও ডাকাতির মতো অপরাধগুলোও বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং অপরাধ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশেও ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের বিষয়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে সতর্কতা জারি করেছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত অপরাধ থেকে বাঁচতে, বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোর উন্নতি করা অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস