যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আরোপিত নতুন শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে, বাণিজ্য এবং শুল্ক বিষয়ক বিভিন্ন কর্মকর্তার ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উদ্বেগের কারণ হয়েছে।
এই শুল্কের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে নাও পড়তে পারে, তবে বিশ্ব বাণিজ্যে এর প্রভাব বাংলাদেশকে প্রভাবিত করতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাতে এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্তত ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, এবং কিছু দেশের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি।
যদিও ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে একটি প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক পুনর্বিন্যাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, শুল্কের কারণে বাজারের অস্থিরতা বাড়বে।
মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুতনিক জানিয়েছেন, অনেক দেশ শুল্ক কমানোর বিষয়ে আলোচনা করতে চাইছে, যা প্রমাণ করে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে সুবিধা নিচ্ছিল। তবে তিনি এও যোগ করেন যে, এখনই শুল্ক স্থগিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো জানিয়েছেন, এটি কোনো আলোচনার বিষয় নয়, বরং বাণিজ্য ঘাটতির কারণে এটি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময় আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে এক্ষেত্রে অন্য দেশগুলোকে শুল্ক কমানোর পরিবর্তে তাদের বাণিজ্য নীতি পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হবে।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আলোচনার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করেছেন। এছাড়া, ইলন মাস্ক, যিনি ট্রাম্পের একজন উপদেষ্টা, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘শূন্য শুল্ক’ পরিস্থিতি তৈরির আশা প্রকাশ করেছেন।
তবে, এই শুল্কের কারণে বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে মন্দা দেখা দিতে পারে।
যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তারা বলছেন, এই পরিস্থিতি সাময়িক এবং ট্রাম্পের নীতির অধীনে বাজার আবার স্থিতিশীল হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি আমেরিকার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এরই মধ্যে ডেমোক্রেট সিনেটর অ্যাডাম শিফ বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গলফ খেলা সম্ভবত তার শাসনকালের সবচেয়ে স্মরণীয় চিত্র হয়ে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কনীতির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব থাকলে, তা বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে, তৈরি পোশাক রপ্তানি অথবা প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করতে সরকারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন