যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির শীর্ষ কৌঁসুলি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত পছন্দের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ৬ জানুয়ারির ঘটনার তদন্তে জড়িত থাকা পাঁচ সাবেক সরকারি কৌঁসুলি।
তারা মনে করেন, এই পদে ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি, এড মার্টিন, পেশাগত নৈতিকতা লঙ্ঘন করেছেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। খবরটি জানিয়েছে সিএনএন।
ডিসির আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে পাঠানো অভিযোগে সাবেক কৌঁসুলিগণ মার্টিনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।
তাদের দাবি, মার্টিন এই পদে আসার পর বেশ কিছু বিতর্কিত কাজ করেছেন।
এর মধ্যে রয়েছে, ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিছু মামলা খারিজ করে দেওয়া, তদন্তের সঙ্গে জড়িত কৌঁসুলিদের বরখাস্ত করা, নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং অফিসের অভ্যন্তরে অসংগতি খোঁজার জন্য তদন্ত শুরু করা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মার্টিন ফেডারেল কৌঁসুলির দায়িত্ব সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করেন।
তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে তদন্ত ঘোষণা করেছেন, পূর্বে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন আসামিদের সহায়তা করেছেন এবং অন্যদের সঙ্গে অনুচিতভাবে যোগাযোগ করেছেন।
অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন ‘সোসাইটি ফর দ্য রুল অফ ল’-এর প্রভাবশালী আইনজীবী এবং সাবেক ফেডারেল বিচারক জে মাইকেল লুটিগ, সাবেক কংগ্রেসম্যান বারবারা কমস্টক, আইনজীবী জর্জ কনওয়ে এবং জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ ও বিল ক্লিনটনের আমলে বিচার বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা স্টুয়ার্ট গারসন।
সাবেক কৌঁসুলিগণ তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, মার্টিন একবার তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে নিজেকে ও তার সহকর্মীদের ‘ট্রাম্পের আইনজীবী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তাদের মতে, এর মাধ্যমে তিনি বিচার বিভাগের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করেছেন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছেন বলে মনে হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘মার্টিনের মক্কেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নন, বরং যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যথায় তার ঘোষিত তদন্তগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত—এই কথার প্রমাণ পাওয়া যায়।’
গত মাসে মার্টিন ‘নির্বাচন রক্ষার’ জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠনের ঘোষণা দেন।
অভ্যন্তরীণ এক ইমেইলে তিনি জানান, এই ইউনিট ‘আমাদের জাতির নির্বাচনী আইনগুলো মেনে চলা নিশ্চিত করবে’।
তিনি আরও লেখেন, ‘প্রায় ২০ বছর পরও, আমেরিকানরা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে পারছে না।
এই আস্থার পুনরুদ্ধার করার অন্যতম সেরা উপায় হলো আমাদের ব্যবস্থা রক্ষা করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।’
৬ জানুয়ারির ঘটনায় অভিযুক্ত কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইউএস কোড ১৫১২(সি)-এর অধীনে আনা অভিযোগগুলোও তিনি পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেন, যা পরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বাতিল হয়ে যায়।
অভিযোগে মার্টিনের বিরুদ্ধে একইসঙ্গে অভিযুক্তদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অভিযোগও আনা হয়েছে।
৬ জানুয়ারির ঘটনায় অভিযুক্তদের হয়ে তিনি আইনি লড়াই চালিয়েছেন, এমনকি যখন তিনি অন্তর্বর্তীকালীন ইউএস অ্যাটর্নি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখনও তিনি তার ক্লায়েন্টদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবীদের পেশাগত আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে।
এদিকে, সিনেটের ডেমোক্র্যাটরা মার্টিনের মনোনয়ন আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর অ্যাডাম শিফ সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, তিনি মার্টিনের মনোনয়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেবেন।
শিফ মনে করেন, মার্টিন এই পদের জন্য অযোগ্য এবং তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন