মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে একটি প্রভাবশালী সংগঠন। রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব ও শিল্পপতিদের সমর্থনপুষ্ট ‘নিউ সিভিল লিবার্টিজ অ্যালায়েন্স’ নামের এই সংগঠনটি ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বিরোধিতা করছে।

তাদের মতে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) ব্যবহার করে এই শুল্ক আরোপ বেআইনি, যা মূলত কংগ্রেসের এখতিয়ার।

সংগঠনটির এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন রিপাবলিকান দলের মধ্যে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরোধিতা বাড়ছে। গত সপ্তাহে, কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য ডেমোক্রেটদের একটি সংশোধনীকে সমর্থন করেছিলেন।

এর ফলে দলের মধ্যে বিভক্তির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

জানা গেছে, এই সংগঠনের পেছনে রয়েছেন প্রভাবশালী আইনজীবী লিওনার্ড লিও এবং শিল্পপতি চার্লস কক। এই দুই ব্যক্তিত্বের সমর্থন এটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

তারা ট্রাম্পের সময় সুপ্রিম কোর্টের তিনজন রক্ষণশীল বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

ফ্লোরিডার একটি হোম গুডস কোম্পানি ‘সিমপ্লিফাইড’-এর পক্ষে এই মামলাটি করা হয়েছে। তাদের মূল অভিযোগ, ট্রাম্প জরুরি অবস্থার ক্ষমতা ব্যবহার করে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

আইনজীবীদের মতে, আইইইপিএ-র মাধ্যমে কেবল বিদেশি হুমকি থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, শুল্ক আরোপের ক্ষমতা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

সংস্থাটি আরও যুক্তি দেখিয়েছে যে, শুল্ক আরোপের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে নয়, বরং কংগ্রেসের হাতে ন্যস্ত। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টের কিছু সিদ্ধান্তের পরিপন্থী হতে পারে।

মামলার প্রেসিডেন্ট মার্ক চেনোওর্থ বলেছেন, আদালতকে এই বিষয়ে বিদ্যমান আইন অনুসরণ করতে হবে।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ফেনটানিল (এক প্রকার মাদক) সংকটকে শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে উল্লেখ করলেও, এর সঙ্গে শুল্কের কোনো সম্পর্ক নেই।

তারা বলছেন, শুল্ক আরোপের মূল উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং রাজস্ব বৃদ্ধি করা।

এই মামলাটি এমন সময়ে দায়ের করা হলো, যখন ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে কিছু সমর্থকের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। কেন্টাকি থেকে নির্বাচিত সিনেটর র‍্যান্ড পল এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, অনেক রিপাবলিকান সিনেটর বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত, যদিও তারা প্রকাশ্যে তেমন কিছু বলছেন না।

এদিকে, রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রাসলি এবং ডেমোক্রেট মারিয়া কান্টওয়েল একটি বিল পেশ করেছেন, যেখানে শুল্ক আরোপ বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প এই বিলের বিরোধিতা করবেন।

এই ঘটনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। শুল্কের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে প্রভাব পড়তে পারে, যা বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান