মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগে বিশ্বজুড়ে অস্থির শেয়ার বাজার। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার জেরে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচকে।
সোমবার বাজারে সূচকগুলো এক ধাক্কায় ৩ শতাংশের বেশি কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাত সপ্তাহ আগের উচ্চমূল্যের থেকে বাজার এখন ২০ শতাংশের বেশি নিচে, যা ‘মন্দা বাজার’-এর লক্ষণ।
তবে, বাজারে এই দরপতনের মধ্যেই ঘটে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। বাজারে যখন ব্যাপক হারে শেয়ার বিক্রির হিড়িক, তখন একটি ভুয়া খবর ছড়িয়ে পরে যে ট্রাম্প শুল্কের সময়সীমা তিন মাস পিছিয়ে দিতে পারেন। এই খবরে শেয়ার বাজারে যেন ‘প্রাণ’ ফিরে আসে।
কয়েক মিনিটের মধ্যে শেয়ারের দাম প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে যায়। যদিও পরে জানা যায় খবরটি ভিত্তিহীন, এবং দ্রুতই শেয়ার বাজার আবার লাল চিহ্নে ফিরে আসে।
শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা বুঝিয়ে দেয়, বিনিয়োগকারীরা এখন ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা চাচ্ছে, এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যা বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। এমনকি শুল্কের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার ইঙ্গিতও তারা আশা করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের একগুঁয়ে নীতি এবং বাজারের প্রতি তাদের উদাসীনতা, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে বিভিন্ন কোম্পানি। কারণ, তাদের আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে শুল্কের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বার্তা না আসায়, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে, ওয়াল স্ট্রিটের অনেকে মনে করছেন, এখনই সময় প্রেসিডেন্ট ও তার টিমের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানোর। তাদের মতে, শেয়ারের দাম কমলেও, এখনই শেয়ার কেনার ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।
কারণ, এমনটা করলে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে ট্রাম্পের ‘দাবার ঘুঁটি’ খেলার প্রবণতাকে উৎসাহিত করা হবে।
অর্থনীতিবিদ এড ইয়ার্ডেনি বলেছেন, বাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে, প্রশাসনের ওপর চাপ বজায় রাখতে হবে। কারণ, বাজার একবার স্থিতিশীল হয়ে গেলে, প্রশাসন তাদের নীতি পরিবর্তনে আগ্রহ হারাবে।
এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন দেশ তাদের বাণিজ্য নীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যাদের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত হবে, বিশ্ব বাজারের এই অস্থিরতা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
তথ্য সূত্র: সিএনএন