ছোটবেলার অভিনেতা, এখন মনোচিকিৎসক রিচার্ড টাইলরের জীবন পরিবর্তনের গল্প। পিটার শ্যাফারের বিখ্যাত নাটক ‘একুয়াস’-এর মাধ্যমে কীভাবে তিনি নিজের ভেতরের আলো খুঁজে পান, সেই কাহিনী তুলে ধরা হলো।
রিচার্ড টাইলর, যিনি একসময় ‘লে মিজারেবলস’-এর জ্যাঁ ভালজ্যাঁ চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ‘একুয়াস’ নাটকটি।
১৯৮৬ সালে, ১৪ বছর বয়সে, তিনি এই নাটকে অ্যালান স্ট্রাং চরিত্রে অভিনয় করেন। নাটকটি তাঁর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল, যা পরবর্তীতে তাঁকে মনোচিকিৎসক হওয়ার পথে চালিত করে। ‘একুয়াস’ ছিল যৌনতা, ধর্ম এবং সহিংসতার মতো জটিল বিষয়গুলির একটি শক্তিশালী চিত্রায়ণ।
টাইলরের মতে, থিয়েটার তাঁকে নতুন জীবন দেয়, বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এনে দেয়।
‘একুয়াস’-এ অভিনয়ের সময় তিনি এক গভীর মানসিক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান। ঘোড়ার প্রতি অ্যালানের তীব্র আবেগ এবং ঈশ্বরের প্রতি তাঁর ভক্তি—এই দুইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তোলার সময় তিনি যেন নিজের ভেতরের গভীরতা অনুভব করেন।
এই অভিজ্ঞতাই তাঁকে আরও বেশি থিয়েটারের প্রতি আকৃষ্ট করে এবং তিনি পরবর্তীকালে নামকরা নাট্যদলে কাজ করেন।
কিন্তু থিয়েটারের জীবন একসময় তাঁর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। একসময় তিনি অনুভব করেন, তাঁর আরোগ্য প্রয়োজন, তাই তিনি মনোচিকিৎসার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
তিনি বুঝতে পারেন, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং ভালো থাকার জন্য এই ধরনের চিকিৎসা অপরিহার্য।
টাইলরের মতে, প্রচলিত থেরাপির ধারণা সবসময় মানুষের উন্নতি এবং ভালো থাকার দিকে মনোনিবেশ করে। কিন্তু তিনি মনে করেন, মানুষের মাঝে মাঝে “অবনমন” বা “decent” এরও প্রয়োজন।
তাঁর মতে, জীবনের সংকটকালে এই “অবনমন”-এর সুযোগ দেওয়া উচিত, যা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। তাঁর লেখা ‘অ্যাজ দ্য কাইট ফলস’ বইটিতে তিনি এই ধারণাই তুলে ধরেছেন।
বর্তমানে তিনি ম্যান্টেল সেল লিম্ফোমা নামক এক ধরনের ক্যান্সারে ভুগছেন এবং এর সাথে লড়াই করছেন। যদিও তাঁর রোগটি এখনও সম্পূর্ণভাবে সারে নি, তবে তিনি এখন ভালো আছেন।
রিচার্ড টাইলরের জীবন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা আমাদের দেখায় কীভাবে শিল্প, থিয়েটার এবং মানুষের প্রতি গভীর উপলব্ধি একজন মানুষকে জীবনের কঠিন পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করতে পারে।
তাঁর যাত্রা, ‘একুয়াস’-এর মঞ্চ থেকে মনোচিকিৎসার জগতে প্রবেশ, আমাদের সবাইকে নতুন করে ভাবতে শেখায়—মানসিক স্বাস্থ্য এবং জীবনের গভীরতা সম্পর্কে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান