ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ওমানে আসন্ন পারমাণবিক আলোচনাকে কেন্দ্র করে তেহরানের মধ্যে গভীর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পাশাপাশি, উভয় দেশের মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও অনেকে সন্দিহান।
এই আলোচনার মূল বিষয় হল ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি, যা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের মতবিরোধ বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি আলোচনার আগ্রহ দেখালেও, ইরানের উপর সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন, যা তেহরানের সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি এবং ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে সরে আসার বিষয়টিও এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
তবে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর তথ্য অনুযায়ী, ইরান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি।
অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন উভয়ই এই আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং উত্তেজনা কমানোর পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে।
এই দুই দেশ মনে করে, আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা যেতে পারে।
তবে, ইসরায়েলসহ কিছু দেশ এখনো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আলোচনার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, এই অঞ্চলের অস্থিরতা বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে, জ্বালানি তেলের দাম এবং মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিকের নিরাপত্তা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবেচ্য।
বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকাংশে মধ্যপ্রাচ্যের উপর নির্ভরশীল, তাই সেখানকার যে কোনো পরিবর্তন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের উপর বিভিন্ন দাবি চাপানো হচ্ছে, যা তেহরানের জন্য গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব কমানো, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করা এবং পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
আলোচনা সফল হলে তা উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে, আলোচনা ব্যর্থ হলে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে, যা পুরো অঞ্চলের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ হবে।
তাই, এই আলোচনার ফলাফল এখন সবার জন্য কৌতূহলের বিষয়।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা