যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ে এক মর্মান্তিক ঘটনায় ফিলিস্তিনি-আমেরিকান ৬ বছর বয়সী এক শিশুকে হত্যার দায়ে এক ব্যক্তির বিচার চলছে। অভিযুক্ত জোসেফ কজুবাকে বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যা মুসলিমবিদ্বেষের একটি চরম দৃষ্টান্ত।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর কয়েক দিন পরেই এই নৃশংস ঘটনাটি ঘটে। অভিযুক্ত কজুবা তার বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করা ৬ বছর বয়সী ওয়াডি আলফায়ুমিকে ছুরি দিয়ে হত্যা করে এবং তার মা হানান শাহীনকে গুরুতরভাবে আহত করে।
আদালতে প্রসিকিউটরদের প্রধান যুক্তি ছিল নিহত শিশুর মায়ের ভয়াবহ সাক্ষ্য। হানান শাহীন জানান, কজুবা প্রথমে তাকে আক্রমণ করে এবং পরে তার ছেলেকে আক্রমণ করে। কজুবা তাদের মুসলিম হওয়ার কারণে বাড়ি ছাড়তে বলেছিল। মামলার শুনানিতে ৯১১ নম্বরে করা একটি ফোন কল এবং পুলিশের ফুটেজও উপস্থাপন করা হয়। কজুবের প্রাক্তন স্ত্রী মেরী কজুবাও সাক্ষ্য দেন, তিনি জানান, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে তার স্বামী উত্তেজিত ছিলেন।
পুলিশের বিবরণ অনুযায়ী, কজুবা একটি ছুরি বের করে শিশুটিকে ২৬ বার আঘাত করে এবং ছুরিখানা তার শরীরেই গেঁথে রাখে। আদালতের বিচারক ছবিগুলোর নৃশংসতা বিবেচনা করে তা দর্শকদের সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ওয়াডির পরিবারের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
উইল কাউন্টি সহকারী স্টেট’স অ্যাটর্নি মাইকেল ফিটজগেরাল্ড জুরিদের বলেন, “আসামী শুধু ছেলেটিকে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি, সে ছুরিটি শিশুর শরীরেই রেখে যায়।
জুরি ৯০ মিনিটের আলোচনার পর তাদের রায় ঘোষণা করে। উইল কাউন্টি স্টেট’স অ্যাটর্নি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, কজুবাকে কমপক্ষে ২০ থেকে ৬০ বছর অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
আদালতের শুনানির আগে প্রসিকিউটররা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং তারা ঠিক কী ধরনের শাস্তি চাইছেন, সে বিষয়েও কিছু জানাননি। উল্লেখ্য, ইলিনয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মুসলিমবিদ্বেষের বিরুদ্ধে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে প্লেনফিল্ড এবং এর আশেপাশের এলাকায়, যেখানে ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের বসবাস, সেখানে এটি গভীর প্রভাব ফেলেছে। ওয়াডির জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম হয়েছিল এবং প্লেনফিল্ডের কর্মকর্তারা তার স্মরণে একটি পার্ক উৎসর্গ করেছেন।
আদালতে কজুবা কোনো কথা বলেননি। তার আইনজীবীরা মামলার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার পাবলিক ডিফেন্ডার জর্জ লেনার্ডও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
আহত হানান শাহীনের শরীরে এক ডজনের বেশি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল এবং সুস্থ হতে তার কয়েক সপ্তাহ লেগেছিল। কজুবাদের বাড়িতে ভাড়া থাকার সময় তাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এমনকি তারা রান্নাঘর ও বসার ঘরও একসঙ্গে ব্যবহার করতেন।
যুদ্ধ শুরুর পর কজুবা তাকে জানান, মুসলিমদের এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই, তাই তাদের চলে যেতে হবে। এরপর কজুবা শাহীনকে আক্রমণ করে, তাকে ধরে মারধর করে এবং দাঁত ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে।
শাহীন আদালতে ইংরেজি ও আরবিতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেন, “সে আমাকে বলেছিল, ‘একজন মুসলিম হিসেবে তোমার মরে যাওয়া উচিত।’”
পুলিশের সাক্ষ্যে জানা যায়, তারা কজুবাকে বাড়ির বাইরে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে বসে থাকতে দেখে।
আলাদাভাবে, নিহত শিশুর বাবা ওদাই আলফায়ুমির দায়ের করা একটি মামলাসহ এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। ওদাই আলফায়ুমি, যিনি শাহীনের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছিন্ন এবং তাদের সঙ্গে থাকতেন না, তিনিও একটি মামলা করেছেন। মার্কিন বিচার বিভাগও একটি ফেডারেল বিদ্বেষমূলক অপরাধের তদন্ত শুরু করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।