গাজায় হাসপাতালগুলোতে ইসরায়েলি হামলা: মানবিক বিপর্যয়ের এক চিত্র
গত কয়েক মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ধারাবাহিক হামলায় সেখানকার হাসপাতালগুলো পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ওপর চালানো হয়েছে অসংখ্যবার আক্রমণ, যার ফলশ্রুতিতে গুরুতর আহত রোগী ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে হাসপাতালগুলোর ওপর হামলার একটি দীর্ঘ তালিকা তৈরি হয়েছে, যা মানবিকতাবোধকে নাড়া দেয়।
সর্বশেষ, গত রবিবার গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আল-আহলি আরব হাসপাতালের ওপর হামলা চালানো হয়, যার ফলে হাসপাতালটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের রাস্তায় বের করে আসতে হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী অবশ্য দাবি করেছে যে, তারা হাসপাতালের ভেতরের একটি হামাস কমান্ড ও কন্ট্রোল কমপ্লেক্সকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। যদিও এই দাবির স্বপক্ষে তারা কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া শত শত মানুষ এই হামলায় নিহত হয়েছেন। এমনকি, হাসপাতালের পরিচালক ঘটনার কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের কাছ থেকে হামলার আশঙ্কা জানিয়ে সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন।
শুধু আল-আহলি হাসপাতালই নয়, আল-শিফা হাসপাতাল, আল-আওদা হাসপাতাল, নাসের হাসপাতাল, আল-আকসা হাসপাতাল, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল এবং ইন্দোনেশীয় হাসপাতালসহ গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়মিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।
এসব হামলায় হাসপাতালের ভবনগুলো যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনিভাবে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাধারণ মানুষের জীবনহানি ঘটেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলা একটি যুদ্ধাপরাধ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী স্থান এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রতিটি যুদ্ধপক্ষের দায়িত্ব।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
হাসপাতালগুলোতে হামলার কারণে গাজার স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আহত রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে পড়েছে, এবং সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
গাজাবাসীর জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সামগ্রী ও মানবিক সহায়তা সরবরাহ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
গাজার পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং গাজার জনগণের জন্য একটি নিরাপদ ও মানবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা