গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মধ্যে বেদনাবিধুর ইস্টার উদযাপন ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানদের।
গাজা উপত্যকা, অধিকৃত পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরা ইসরায়েলের হামলা ও কঠোর পরিস্থিতির মধ্যে এবারের ইস্টার উদযাপন করেছেন। গাজায় গত প্রায় ৫০ দিন ধরে খাবার বা ত্রাণ প্রবেশ করতে না দেওয়ায় সেখানকার মানুষজন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে সেন্ট পরফিরিয়াস গ্রিক অর্থোডক্স চার্চে রবিবার ইস্টার পালন করেন।
ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান আরও বোমা ফেলবে—এমন ভয়ে পরিবারগুলো অন্যান্য উৎসব বাতিল করে দেয়। কারণ, এতে আরও অনেক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। জানা গেছে, রবিবারেই অবরুদ্ধ এই অঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে, হামাস নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলে হামলার কয়েক দিন পরেই সেন্ট পরফিরিয়াস কম্পাউন্ডে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েল জানায়, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলায় আশ্রয় নেওয়া অন্তত ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে খোলা আকাশের নিচে ইস্টার mass-এ সমবেত হওয়া হাজারো ক্যাথলিক তীর্থযাত্রীর সামনে পোপ ফ্রান্সিস গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি হামাসসহ অন্যান্য গোষ্ঠীকে গাজায় আটক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার কথা বলেন।
পশ্চিম তীরে অনেক খ্রিস্টান, এমনকি ফিলিস্তিনিদেরও পবিত্র স্থানগুলোতে ইস্টার পালনের অনুমতি দেয়নি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। জেরুজালেমের পুরনো শহরেও ইসরায়েলি বাহিনী নিরাপত্তা জোরদার করে। ফিলিস্তিনি থিংক ট্যাংক ‘আল-শাবাকা’-র নীতি ফেলো ফাতিহ নিমের আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “কেউ কেউ বলবেন, পবিত্র সমাধির আশেপাশে এখন উপাসনাকারীর চেয়ে বেশি সেনা, নিরাপত্তা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের ভেতরে ডজনখানেক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এর ফলে শুধু পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি খ্রিস্টানরাই নয়, জেরুজালেম এবং ১৯৪৮ সালের ভূখণ্ডের বাসিন্দারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
তিনি আরও জানান, অনেক মানুষকে মারধর করা হয়েছে এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও পথচারীরা খ্রিস্টানদের প্রতি অপমানজনক মন্তব্য করেছেন।
এ বছর পশ্চিম তীর থেকে মাত্র ৬ হাজার ফিলিস্তিনিকে ইস্টার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এমনকি ফিলিস্তিনে ভ্যাটিকানের প্রতিনিধিকেও চার্চে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ফিলিস্তিনি ধর্মগুরু ও দার আল-কালিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট মিটরি রাহেব বলেন, বর্তমান ইসরায়েলি বিধিনিষেধগুলো খুবই কঠোর। তিনি বলেন, “আমি নিজে একজন পাদরি হয়েও পবিত্র সপ্তাহে যোগ দেওয়ার অনুমতি পাইনি। অথচ খ্রিস্টানদের জন্য এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়েই যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল এবং তিনি জেরুজালেমে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। ফিলিস্তিনি-খ্রিস্টান সম্প্রদায়, যারা ২ হাজার বছর ধরে এখানে বসবাস করছে, তাদের এই উৎসব পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
রাহেব আরও জানান, ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান, বিশেষ করে পাদরিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ বাড়ছে। এ বছর ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় বহু ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, সশস্ত্র পুলিশ ও সেনাদের সমর্থনে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী এবং রাজনীতিবিদরা আল-আকসা মসজিদের চত্বরে প্রায়ই প্রবেশ করে বিতর্কিত কাজ করছেন। এই স্থানটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ইসরায়েল সরকার এই স্থানে অমুসলিমদের উপাসনার অনুমতি দেয় না।
মিশরের কপটিক অর্থোডক্স চার্চের প্রধান পোপ তাওয়াদ্রোস দ্বিতীয় গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি ইস্টার উদযাপনের সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমি ধ্বংসের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ধরনের অবিচারের শিকার হচ্ছেন।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা