চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে যাচ্ছেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছেন। এই অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলা বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
খবর অনুযায়ী, আগামী সোমবার তিনি ভিয়েতনাম সফর শুরু করবেন। এরপর মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াতেও তার যাওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করাই এই সফরের মূল উদ্দেশ্য। বিশেষ করে ভিয়েতনামের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য চুক্তি এবং রেল নেটওয়ার্ক উন্নয়নে বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করার পর চীন এই অঞ্চলে স্থিতিশীল অংশীদার হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে ভিয়েতনামের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
দেশটির অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ। কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়, যেখানে দেশটির জিডিপির ২৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীনের এই সফরের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। চীন দেখাতে চাইছে যে তারা একটি নিয়ম-ভিত্তিক বাণিজ্য ব্যবস্থার নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বাণিজ্য সম্পর্ক নষ্ট করছে।
এই অঞ্চলের দেশগুলো একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তেমনই তারা চীনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। কারণ, এই অঞ্চলের দেশগুলোর বাণিজ্যের একটি বড় অংশ চীনের সঙ্গে জড়িত।
চীনের কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো গত বছর চীন থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করেছে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে, বাজারে চীনা পণ্যের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ভিয়েতনামসহ এই অঞ্চলের দেশগুলো তাই কোনো পক্ষের প্রতিপক্ষ হতে চাইছে না, বরং তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে।
ভিয়েতনাম এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং চীন থেকে আসা কিছু পণ্যের উপর নজরদারি বাড়িয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ, একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্র তাদের গুরুত্বপূর্ণ রফতানি বাজার, তেমনই নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও তারা চীনের প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।
অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
শি জিনপিংয়ের এই সফর বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি শুধু ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বরং ইন্দোনেশিয়া এবং স্পেনের সঙ্গেও সম্পর্ক আরও গভীর করতে চাইছেন।
চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়া সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং কম্বোডিয়াকে তারা ‘অবিচ্ছেদ্য বন্ধু’ হিসেবে মনে করে।
চীনের প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব মোকাবেলা করতে চাইছেন এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব আরও বাড়াতে চাইছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান