ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি: আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন যাচাইকরণ, অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের দাবি শিথিল।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু বিষয়ক আলোচনা বর্তমানে নতুন মোড় নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরিভাবে ভেঙে দেওয়ার পরিবর্তে এখন এর যাচাইকরণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁদের মূল আলোচনা হবে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া এবং ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য অস্ত্র তৈরি হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করা।
এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চাইছে। অতীতে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কর্মকর্তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়ার দাবি জানালেও, এবার সেই অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে।
ইরানের পক্ষ থেকে অবশ্য এই ধরনের দাবিকে বরাবরই নস্যাৎ করা হয়েছে। তাদের মতে, আন্তর্জাতিক নিয়মের অধীনে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু শক্তি ব্যবহারের অধিকার তাদের আছে।
জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে যে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। বর্তমানে যা প্রায় ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার খুব কাছাকাছি।
উল্লেখ্য, পারমাণবিক শক্তি এবং অস্ত্র তৈরিতে ইউরেনিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
আলোচনায় ইরানের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার হুমকি বা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না এবং ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিষয় উত্থাপন করা যাবে না।
ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণেই এমনটা করা হয়েছে।
উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগিয়ে চলেছে। আগামী ১৯শে এপ্রিল রোমে পরবর্তী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে, এর বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আগের আলোচনাগুলোতে, বিশেষ করে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও, পরবর্তীতে ট্রাম্প প্রশাসন সেই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। এবার যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘আরো শক্তিশালী’ চুক্তি করতে চাইছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল বরাবরই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার পক্ষে। তারা লিবিয়ার উদাহরণ টেনেছে, যেখানে ২০০৩ সালে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করার পর দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল।
তবে, ইরানের কর্মকর্তারা এই ধরনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের মতে, লিবিয়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না, যা তাদের দুর্বল করে দেবে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক মহল এই আলোচনার দিকে গভীর মনোযোগ রাখছে। কারণ, এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যেকার সম্পর্ক নয়, বরং বিশ্ব শান্তির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন