ওয়েলসের অভিনেত্রী, রোজী শীহি, যিনি সম্প্রতি লন্ডনের ওল্ড ভিক থিয়েটারে তাঁর অভিনয়-এর জন্য অলিভার অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন, তাঁর অভিনয় জীবন এবং নিজের শিকড়ের প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
নাট্য জগতে নিজের স্থান তৈরি করার পথে, তিনি কীভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন, সেই গল্পই তুলে ধরা হলো।
পোর্ট টালবটের এক সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা রোজীর শৈশব কেটেছে বিজ্ঞান এবং নাচের প্রতি ভালোবাসার মধ্যে।
তাঁর বাবা ছিলেন একজন প্রকৌশলী এবং মা ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
ছোটবেলা থেকেই শিল্পের প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল, যা তাঁকে অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করেছে।
ওয়েস্ট গ্ল্যামরগান ইয়ুথ থিয়েটারে যোগদানের মাধ্যমে অভিনয়ের জগতে তাঁর পথচলা শুরু হয়, যেখান থেকে মাইকেল শীন, রাসেল টি ডেভিস-এর মতো খ্যাতিমান তারকারা উঠে এসেছেন।
রোজীর জীবনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা রিচার্ড বার্টন, যিনিও ওয়েলসের, তাঁর শহর থেকে উঠে এসেছিলেন।
শীহি মনে করেন, “আমি এমন এক ঐতিহ্য থেকে এসেছি, যেখানে আমার মতো মানুষেরও এই কাজটি করার সুযোগ আছে।”
তবে, অভিনয় জগতে প্রবেশ করাটা তাঁর জন্য সহজ ছিল না।
বিশেষ করে, নিজের আঞ্চলিক টান নিয়ে তিনি দ্বিধায় ছিলেন।
তিনি স্বীকার করেন, “আমি মনে করতাম, টিকে থাকতে হলে আমাকে ইংরেজিদের মতো কথা বলতে হবে।”
তাই, একসময় তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলতে শুরু করেন।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, তিনি তাঁর নিজের পরিচয়কে গুরুত্ব দিতে শিখেছেন।
ওয়েলসে ফিরে আসার পর, তিনি অনুভব করেন তাঁর আসল সত্তা।
নিজের মাতৃভাষায় থিয়েটার করার সুযোগ পাওয়ার পর, তিনি যেন নতুন করে নিজেকে খুঁজে পান।
রোজী বলেন, “তখন আমার মনে হয়েছিল, ‘হ্যাঁ, এটাই তো আমি, এটাই আমার স্বর।’”
রোজীর অভিনয় জীবন বিভিন্ন চরিত্রে পরিপূর্ণ।
তিনি শেক্সপিয়ারের ‘রিচার্ড থ্রি’ থেকে শুরু করে ডেভিড মামেটের ‘ওলেনা’, এমনকি ‘ম্যাকিনাল’-এর মতো কঠিন চরিত্রেও অভিনয় করেছেন।
তিনি এমন চরিত্র বেছে নিতে পছন্দ করেন, যেখানে সমাজের প্রচলিত ধারণা ভেঙে দেওয়া যায়।
তিনি জানান, “আমি এমন চরিত্রে অভিনয় করতে ভালোবাসি, যাদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে।
চরিত্র বা চেহারার দিক থেকে আমাকে যদি কদর্যও দেখায়, তাতে আমার আপত্তি নেই।
আমি সবসময় এতে আগ্রহী থাকি।”
তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলোর মাধ্যমে নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের উপর অত্যাচারের স্বরূপ তিনি তুলে ধরেন।
‘ম্যাকিনাল’-এর জন্য তিনি জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণের ধারণা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন।
রোজীর মতে, “এখন আমাদের কাছে অন্তত সেই ভাষা আছে, যা দিয়ে আমরা বলতে পারি, ‘ওহ, এটা তো এমন।
তুমি এটা আমার সাথে করতে পারো না।’”
রোজী শীহি বর্তমানে চলচ্চিত্র পরিচালক আন্ড্রেয়া আর্নল্ডের কাজে মুগ্ধ।
মঞ্চে তাঁর পছন্দের অভিনেত্রীরা হলেন হেলেন ম্যাকক্রোরি, জ্যানেট ম্যাকটিয়ার এবং স্যালি হকিংস।
ভবিষ্যতে তিনি লেডি ম্যাকবেথ, ডাচেস অফ মালফি, হেদ্দা গ্যাবলার এবং ইউজিন ও’নিলের আনা ক্রিস্টির মতো চরিত্রে অভিনয় করতে চান।
এই চরিত্রগুলো সবই শক্তিশালী নারীদের, যারা নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলে।
রোজী শীহির এই যাত্রা, ওয়েলসের পোর্ট টালবট থেকে লন্ডনের মঞ্চ পর্যন্ত, নিঃসন্দেহে অনেক তরুণ অভিনেত্রীর জন্য অনুপ্রেরণা।
তাঁর কঠোর পরিশ্রম, নিজের শিকড়ের প্রতি ভালোবাসা এবং সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ভাঙার মানসিকতা, তাঁকে আরও অনেক দূর নিয়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান