মহাকাশে নারীদের অভিযান: বিলাসিতা নাকি নারী অধিকারের নতুন দিগন্ত?
গত ১৪ই এপ্রিল, টেক্সাসের মরুভূমি থেকে নীল রঙের একটি রকেট আকাশে পাড়ি জমায়। এই রকেটটি ছিল ‘ব্লু অরিজিন’-এর তৈরি, যা অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মালিকানাধীন একটি মহাকাশ প্রযুক্তি সংস্থা।
এই বিশেষ ফ্লাইটে ছিলেন প্রভাবশালী কয়েকজন নারী, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন পপ তারকা কেটি পেরি এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব গেল কিং। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীদের মহাকাশ যাত্রার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা।
তবে এই অভিযানের প্রেক্ষাপট নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। একদিকে যখন বিশ্বজুড়ে নারী অধিকার এবং সাম্যের কথা বলা হচ্ছে, তখন এই ধরনের অতি-ধনীদের বিলাসিতা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সমালোচকদের মতে, এই বিশাল অর্থ খরচ করে মহাকাশে যাওয়ার পরিবর্তে যদি সেই অর্থ পৃথিবীর দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া নারীদের কল্যাণে ব্যয় করা হতো, তাহলে হয়তো আরও বেশি ইতিবাচক ফল পাওয়া যেত।
অভিযানের প্রস্তুতির সময় ‘এলে’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই ফ্লাইটিকে “ঐতিহাসিক মিশন” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, “এই প্রথম মহাকাশে কেউ মেকআপ ও চুলের সাজসজ্জা করে গেলেন।”
সমালোচকরা বলছেন, এই ধরনের প্রচার নারী অধিকারের নামে এক ধরনের লোকদেখানো বিষয়। কারণ, যেখানে বহু নারীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, এমনকি মৌলিক অধিকার নেই, সেখানে এই ধরনের উদযাপন নারী অধিকারের প্রকৃত ধারণা থেকে অনেক দূরে।
জেফ বেজোসের এই মহাকাশ অভিযানের পেছনে রয়েছে বিশাল অঙ্কের অর্থ। মার্চ মাস পর্যন্ত বেজোসের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ একদিকে যেমন প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রমাণ, তেমনই বৈষম্য এবং সম্পদের কেন্দ্রীভবনের বিষয়টিও তুলে ধরে।
এই ঘটনার সঙ্গে পরিবেশগত উদ্বেগের বিষয়টিও জড়িত। ব্লু অরিজিন প্রায়ই তাদের ওয়েবসাইটে পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলে থাকে। তারা কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দেয়।
তবে অ্যামাজনের মালিক হিসাবে বেজোসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারণ, অ্যামাজন প্লাস্টিক প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
এই ধরনের কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন সমাজের ধনী ও প্রভাবশালী অংশের ক্ষমতা প্রদর্শন করে, তেমনই এটি বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্যকেও স্পষ্ট করে তোলে।
অনেকে মনে করেন, এই ধরনের অভিযান সমাজের বৃহত্তর অংশের জন্য কোনো উপকারী বার্তা দেয় না। বরং, এটি বিদ্যমান ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই সামনে নিয়ে আসে।
বস্তুত, এই মহাকাশ যাত্রা নারী অধিকারের নামে এক ধরনের বাজারজাতকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। যেখানে একদিকে গাজায় নারী ও শিশুদের ওপর বোমা বর্ষণ চলছে, সেখানে এই ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ উদযাপন অনেকের কাছেই অর্থহীন মনে হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা