বিংশ বছরে পা রাখল ইউটিউব: টেলিভিশন আর ইন্টারনেটের যুগলবন্দী।
আজ থেকে ঠিক কুড়ি বছর আগে, ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে যাত্রা শুরু হয়েছিল ইউটিউবের। শুরুতে, এর ধারণা ছিল খুবই সাদাসিধে – ব্যবহারকারীরা নিজেদের তৈরি করা ভিডিও আপলোড করতে পারবে এবং সারা বিশ্বের মানুষ সেই ভিডিওগুলো দেখতে পারবে।
প্রথম আপলোড হওয়া ভিডিওটি ছিল খুবই সাদামাটা, যেখানে দেখা যায় এক ব্যক্তি চিড়িয়াখানায় গিয়ে কিছু হাতির ভিডিও বানাচ্ছেন। সেই ভিডিওর সঙ্গে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের কোনো মিল ছিল না।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, ইউটিউব যেন এক বিশাল পরিবর্তনের সাক্ষী।
বর্তমানে ইউটিউব আর টেলিভিশনের মধ্যেকার বিভেদ প্রায় ঘুচে গেছে। ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নীল মোহন সম্প্রতি বলেছেন, “ইউটিউব এখন নতুন টেলিভিশন।”
কথাটা হয়তো অনেকের কাছেই খুব পরিচিত লাগছে, কারণ এখন স্মার্ট টিভিতে ইউটিউব ভিডিও দেখার প্রবণতা বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় এক বিলিয়ন ঘণ্টা ধরে মানুষ স্মার্ট টিভিতে ইউটিউব দেখে।
শুধু তাই নয়, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও এখন তাদের অনুষ্ঠান ইউটিউবে আপলোড করছে। উদাহরণস্বরূপ, ডিজনি তাদের ‘স্টার ওয়ার্স’ সিরিজের কিছু পর্ব ইউটিউবে প্রকাশ করেছে।
আবার, আইটিভি’র মতো চ্যানেলগুলোও তাদের অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে ইউটিউবে দেখাচ্ছে।
এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো, ইউটিউবাররা এখন টেলিভিশন জগতের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। অনেক ইউটিউবার তাদের নিজস্ব অনুষ্ঠান তৈরি করছেন, যা সরাসরি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সম্প্রচারিত হচ্ছে।
‘বিস্ট গেমস’ নামে একটি রিয়েলিটি শো, যা তৈরি করেছেন জনপ্রিয় ইউটিউবার মিস্টারবিস্ট, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুক্তি পাওয়ার পর দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই শো থেকে নির্মাতারা ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি লাভ করেছেন।
কিন্তু কিভাবে এই পরিবর্তন এলো? ইউটিউবাররা কিভাবে টেলিভিশন জগতে প্রবেশ করলেন? এর একটি বড় কারণ হলো, ইউটিউবারদের বিশাল দর্শকপ্রিয়তা।
উদাহরণস্বরূপ, ‘দ্য সিডিমেন’ নামের সাতজন ইউটিউবারের একটি দল, যাদের চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১৪৬ মিলিয়ন। তারা তাদের নিজস্ব রিয়েলিটি শো ‘ইনসাইড’ ইউটিউবে তৈরি করেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি, নেটফ্লিক্সও এই শোটির দ্বিতীয় সিজন কিনে নিয়েছে।
প্রযুক্তি এবং বিনোদন জগতের এই মিলন, পুরনো ধ্যান-ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে। ঐতিহ্যবাহী টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এখন ইউটিউবারদের প্রতি আরও বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বিবিসি’র মতো চ্যানেলগুলো তাদের অনুষ্ঠানে ইউটিউবারদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তবে, এই পরিবর্তনের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইউটিউবারদের নিজস্বতা এবং সৃজনশীলতাকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যখন তারা টেলিভিশনের ফরম্যাটে কাজ করেন।
অন্যদিকে, ইউটিউবও টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের প্ল্যাটফর্মকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন ধরণের কনটেন্ট তৈরি করছে, যা দর্শকদের আকৃষ্ট করতে পারে।
ইউটিউবের মাধ্যমে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের দর্শক সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চ্যানেল ফোর তাদের পুরোনো কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ইউটিউবে আপলোড করে ভিউয়ার্স সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
তবে, প্রশ্ন হলো, ইউটিউব কি টেলিভিশনকে টেক্কা দিতে পারবে? ইউটিউব কি শুধু টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর কনটেন্ট হোস্ট করবে, নাকি নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে?
যদিও ইউটিউব মাঝেমধ্যে মূলধারার মিডিয়ার মতো হওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য এখনো প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই টিকে থাকা।
সবশেষে, ইউটিউব এবং টেলিভিশনের মধ্যেকার পার্থক্য ধীরে ধীরে কমে আসছে। ইউটিউব এখন টেলিভিশনের মতো হচ্ছে, আবার টেলিভিশনও ইউটিউবের আদলে নিজেদের পরিবর্তন করছে।
এই দুই মাধ্যমের মধ্যেকার সম্পর্ক এখন আরও গভীর হচ্ছে, যা বিনোদন জগৎকে নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান