হারানো স্মৃতি: ব্লুম অ্যান্ড রেজ (টেপ টু) – বন্ধুত্বের গল্প, শোক আর আত্ম-অনুশোচনা
স্মৃতিগুলো আসলে কেমন যেন, সময়ের সাথে সাথে তারা নতুন রূপ নেয়। আমরা যখন অতীতের দিকে তাকাই, তখন সেই গল্পগুলোও বদলে যায়, কারণ সময়ের সাথে সাথে আমরাও তো পাল্টে যাই।
‘লস্ট রেকর্ডস: ব্লুম অ্যান্ড রেজ (টেপ টু)’ নামের একটি ভিডিও গেম সেই গল্পই বলে, যেখানে ১৯৯৫ সালের গ্রীষ্মকালে মিশিগানের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে চার কিশোরীর গভীর বন্ধুত্বের কাহিনী ফুটে উঠেছে।
প্রথম অংশে, তারা একটি ব্যান্ড গঠন করে, জঙ্গলের পুরনো একটি ঘরে তাদের আড্ডা তৈরি করে এবং কাছের একটি গর্ত থেকে আসা অতিপ্রাকৃত শক্তির মুখোমুখি হয়। কিন্তু শরৎ আসার সাথে সাথে, যখন তারা একটি কনসার্টের পরিকল্পনা করে, তখন তাদের জীবনে নেমে আসে এক গভীর ট্র্যাজেডি।
গল্পের এই দ্বিতীয় অংশে, সেই কিশোরীরা আবার মিলিত হয়, বহু বছর পর তাদের পুরনো শহরে। তারা এখন পরিণত, অভিজ্ঞ এবং তাদের কৈশোরের ঘটনার প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে।
গল্পের প্রধান চরিত্র সোয়ান, যে একজন ভালো ফটোগ্রাফার, তার ক্যামেরাই প্রথম পর্বে খেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। সে এখন একা জীবন যাপন করে।
অটাম এখনো উদ্বেগে ভোগে, আর নোরার এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ পরিচিতি রয়েছে।
তাদের বন্ধু ক্যাট, যার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম পর্বের শেষে তাদের জীবনকে এলোমেলো করে দেয়।
এই গেমটিতে, খেলোয়াড়দের কথোপকথন এবং স্মৃতিচিহ্নগুলোর মাধ্যমে সোয়ানকে তার বন্ধুদের সাথে মিলিত হতে সাহায্য করতে হয়।
এই পর্বে ক্যামেরার ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক কম। প্রথম অংশে, খেলোয়াড়দের বিভিন্ন দৃশ্য ধারণ করতে হতো, যা তাদের নিজস্ব ফুটেজের ভাণ্ডার তৈরি করত।
এখানে খেলার সুযোগও তুলনামূলকভাবে কম। শুরুতে একটি বাক্স গোছানো এবং পরে ক্যাটের ঘরে চুপিসারে প্রবেশের মতো কয়েকটি ছোট কাজ করতে হয়।
ব্যক্তিগতভাবে, আমার মনে হয়েছে এখানে সক্রিয়ভাবে খেলার সুযোগ আরও বেশি থাকতে পারত।
তবে, গেমটিতে কিছু হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য রয়েছে, যেখানে মেয়েরা ক্যাটের অসুস্থতা এবং একে অপরের প্রতি তাদের অনুভূতির সঙ্গে লড়াই করে।
এর মধ্যে দুটি দৃশ্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: সোয়ান এবং নোরার একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ, যেখানে তারা কথা বলে এবং উপহার বিনিময় করে, তাদের হৃদয়ের গভীরের কথাগুলো প্রকাশ করে।
আরেকটি দৃশ্যে, সোয়ান ক্যাটের ঘরে চুপিসারে প্রবেশ করে এবং কেমোথেরাপির আগে তার চুল কাটতে সাহায্য করে।
এই গেমটি কিশোর বয়সের প্রেম, শোক এবং হারানোর অনুভূতি নিয়ে গভীর সংবেদনশীলতার সাথে লেখা হয়েছে, যা সম্ভবত ভিডিও গেমিং জগতে বিরল।
গেমটির শেষটা কিছুটা অস্পষ্ট, যা সম্ভবত খেলার অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
জঙ্গলের সেই রহস্যময় গর্ত, যা চরিত্ররা “অবিস” নামে ডাকে, তা প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
গেমের অতিপ্রাকৃত ঘটনাগুলিও তাই।
কখনও কখনও, জীবনের কোনো উত্তর থাকে না, আর আমাদের শৈশবে চারপাশে দেখা সেই জাদু হয়তো আসলে ছিল বন্ধুত্ব, কল্পনা অথবা এই পৃথিবীতে কিছু হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
গেমটি যেন “স্ট্রেঞ্জার থিংস” এবং কেলি রিখার্টের মিলিত রূপ।
‘লস্ট রেকর্ডস’ মূলত প্রেম, শোক এবং আত্ম-অনুশোচনার গল্প, যা বয়সের সাথে সাথে আরও গভীরতা পায়।
গেমটি খেলতে খেলতে, আপনিও যেন তাদের একজন হয়ে উঠেন, যারা জঙ্গলে কাটানো সেই দিনগুলোর স্মৃতি আজও অনুভব করে।
তথ্যসূত্র: The Guardian