জ্যোতিষশাস্ত্রের ধারণা অনুযায়ী, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। যুগ যুগ ধরে, এই বিশ্বাস মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে আসছে।
পাশ্চাত্য জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো-র মতো গ্রহগুলি প্রজন্মের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। এই গ্রহগুলোর রাশি পরিবর্তনের ফলে একটি প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলি গঠিত হয়।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন প্রজন্মের উপর এই গ্রহগুলোর প্রভাব এবং তাদের বৈশিষ্ট্যগুলো:
১. নীরব প্রজন্ম (১৯২৮-১৯৪৫): এই প্রজন্মের উপর ইউরেনাসের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি।
১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে ইউরেনাস মেষ রাশি থেকে মিথুন রাশিতে প্রবেশ করে। এই সময়কালে বিশ্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
এই প্রজন্মের মানুষেরা ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ে বিশ্বাসী। নেপচুনের কন্যা রাশিতে অবস্থানের কারণে তারা ছিলেন আদর্শবাদী, তবে তাদের সেই আদর্শে পৌঁছানো কঠিন ছিল।
প্লুটোর কর্কট ও সিংহ রাশিতে অবস্থানের কারণে পরিবার এবং আত্ম-প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে চেয়েছেন।
২. বেবি বুমার প্রজন্ম (১৯৪৬-১৯৬৪): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে শান্তি ফিরে আসার পরে এই প্রজন্মের জন্ম।
ইউরেনাস এই সময়ে মিথুন থেকে কন্যা রাশিতে অবস্থান করে। এই প্রজন্মের মানুষেরা ছিলেন প্রতিবাদী এবং সমাজের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রহী।
নেপচুনের তুলা ও বৃশ্চিক রাশিতে অবস্থানের কারণে তারা প্রেম ও যৌনতার ক্ষেত্রে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছিলেন। প্লুটোর সিংহ ও কন্যা রাশিতে অবস্থানের ফলে তারা বিলাসিতা এবং আত্ম-অনুসন্ধানে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।
৩. এক্স প্রজন্ম (১৯৬৫-১৯৭৯): এই প্রজন্মের উপর ইউরেনাসের প্রভাব ছিল কন্যা থেকে বৃশ্চিক রাশিতে।
তারা সমাজের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ভেঙে নিজেদের পরিচিতি তৈরি করতে চেয়েছেন। নেপচুনের বৃশ্চিক ও ধনু রাশিতে অবস্থানের কারণে এই প্রজন্মের মানুষেরা ভ্রমণ, আধ্যাত্মিকতা এবং জীবনের গভীরতা অন্বেষণে আগ্রহী ছিলেন।
প্লুটোর তুলা রাশিতে থাকার কারণে তারা বিবাহবিচ্ছেদ এবং কর্মজীবী মায়ের ধারণাটিকে স্বাভাবিক করে তুলেছিলেন।
৪. সহস্রাব্দ প্রজন্ম বা মিলেনিয়ালস (১৯৮০-১৯৯৫): ইউরেনাস এই সময়কালে বৃশ্চিক থেকে ধনু রাশিতে প্রবেশ করে।
এই প্রজন্মের মানুষেরা প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি এবং বিশ্বায়নের সাক্ষী ছিলেন। নেপচুনের ধনু ও মকর রাশিতে অবস্থানের কারণে তারা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের ব্যবসার মডেল তৈরি করেছেন।
প্লুটোর তুলা, বৃশ্চিক ও ধনু রাশিতে অবস্থানের ফলে প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা বিশ্বজুড়ে সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন।
৫. জেনারেশন জেড বা জুমার্স (১৯৯৬-২০০৯): এই প্রজন্মের উপর ইউরেনাসের প্রভাব ছিল মকর, কুম্ভ ও মীন রাশিতে।
তারা প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ভেঙে নতুন পথে হেঁটেছেন। নেপচুনের কুম্ভ ও মীন রাশিতে অবস্থানের কারণে তারা উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা এবং সামাজিক পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহী ছিলেন।
প্লুটোর ধনু ও মকর রাশিতে থাকার কারণে তারা ব্যবসার নতুন পদ্ধতি তৈরি করেছেন।
৬. আলফা প্রজন্ম (২০১০-২০২৪): ইউরেনাস এই সময়ে মেষ থেকে বৃষ রাশিতে অবস্থান করছে।
এই প্রজন্মের মানুষেরা জলবায়ু পরিবর্তন এবং আর্থিক বিষয়ে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছেন। নেপচুনের কুম্ভ ও মীন রাশিতে অবস্থানের কারণে তারা নিজেদের ভেতরের ক্ষমতাকে আবিষ্কার করতে চাইছে।
প্লুটোর মকর রাশিতে অবস্থানের ফলে তারা দুর্নীতি এবং মহামারীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
৭. বিটা প্রজন্ম (২০২৫-২০৩৯): আসন্ন এই প্রজন্মের উপর ইউরেনাসের প্রভাব থাকবে বৃষ থেকে কর্কট রাশিতে।
তারা ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধের প্রতি আকৃষ্ট হবে। নেপচুনের মীন থেকে বৃষ রাশিতে প্রবেশের ফলে তারা শিল্প ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহী হবে।
প্লুটো এই সময়কালে কুম্ভ রাশিতে অবস্থান করবে, যা প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভবিষ্যতের সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
জ্যোতিষশাস্ত্র একটি জটিল বিষয়, এবং এই নিবন্ধে প্রদত্ত তথ্যগুলি কেবল একটি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে।
প্রতিটি প্রজন্মের বৈশিষ্ট্যগুলি বিভিন্ন কারণের দ্বারা গঠিত হয়, যার মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত।
তথ্য সূত্র: পিপল